Coronavirus

করোনা রুখতে মাঙ্কি টুপি ‘ভরসা’ পাচারে

শনিবার গভীর রাতে কালিয়াচকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রচুর নেশার সিরাপ উদ্ধার করল বিএসএফ। তবে কাউকে ধরতে পারেননি জওয়ানেরা। 

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

কালিয়াচক শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৪:০৪
Share:

ফাইল চিত্র

চৈত্র মাসেও ‘মাঙ্কি টুপি’। হাতে গ্লাভস। রক্ষীদের নজর এড়ানোর পাশাপাশি করোনা রুখতে সীমান্তে চোরাকারবারিদের হাতিয়ার সে সবই। অভিযোগ, ওই ছকেই করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও দেদার পাচার চলছে মালদহ সীমান্তে।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে কালিয়াচকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রচুর নেশার সিরাপ উদ্ধার করল বিএসএফ। তবে কাউকে ধরতে পারেননি জওয়ানেরা।

সীমান্তে পাচার নিয়ে বিএসএফের পাশাপাশি উদ্বিগ্নে বাসিন্দারাও। বিএসএফের এক জওয়ান বলেন, ‘‘করোনা রুখতে পাসপোর্ট-ভিসা বাতিল হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র দিয়ে যাতায়াতকারী পণ্যবাহী গাড়ির চালক, সহকারী চালকদের নিয়মিত থার্মাল স্ক্রিনিং করছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে অন্ধকারে দু’দেশের চোরা কারবারীরা জমায়েত করে কারবার চালাচ্ছে। আর তাতেই করোনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।’’

Advertisement

এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্তকে যেমন চেনা যায় না, তেমনই সীমান্তে পাচারকারীদেরও চেনা যায় না। সূর্য ডুবলেই সীমান্তে চোরাকারবার চালায় তারা। আর দিনে মানুষের ভিড়ে মিশে থাকে।’’

পাচারের সঙ্গে যুক্ত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘‘করোনার ভয়ে এখন জমায়েত কম হচ্ছে। মানুষ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। ফলে করোনাই আমাদের হাতিয়ার। তবে আমরাও নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ম্যাঙ্কি টুপি, গ্লাভস ব্যবহার করছি।’’

করোনা-আতঙ্কে মহদিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সীমান্তকেন্দ্র দিয়ে দু’দেশের নাগরিকদের যাতায়াত বন্ধ হয়েছে। তবে পণ্যবাহী ট্রাক পরিষেবা চালু রয়েছে। পরিবহণ কর্মীদের নিয়মিত খার্মাল স্ক্রিনিং করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা।

তবে করোনা আতঙ্কের মধ্যেও সীমান্তে বদলায়নি পাচারের ছবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, নেশার সিরাপ থেকে শুরু করে জালনোট, গরু পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায়ই সীমান্তে উদ্ধার হচ্ছে নেশার সিরাপ, জালনোট।

বিএসএফ জানিয়েছে, শনিবার রাতে কালিয়াচকের শশ্মানি সীমান্তে টহল দিচ্ছিলেন ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানেরা। সেই সময় কাঁটাতারের পাশে সন্দেহজনক জনাদশেক যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। ধাওয়া করলে জওয়ানদের দিকে পাথর ছোড়া হয়। পাল্টা ‘পাম্প অ্যাকশন গান’ থেকে এক রাউন্ড গুলি চালান জওয়ানেরা। অন্ধকারে পালিয়ে যায় কারবারীরা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় ৪৮০ বোতল নেশার সিরাপ। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ শাখার কর্তা রবি রঞ্জন বলেন, ‘‘সীমান্তে নজরদারি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নেশার সিরাপ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনায় কারবারীদের খোঁজ শুরু হয়েছে।’’

বাইরে থেকে ফিরলে ১৪ দিনের হোম কোয়রান্টিনে থাকতেই হবে। সেটা না মানলে এবার শুধু যে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হবে, তা নয়। তার আগে গ্রেফতারও করা হতে পারে সেই নির্দেশ অমান্যকারীদের। এবার এমনই সিদ্ধান্ত নিল আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লক প্রশাসন।

একই সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও জানিয়েছে দিয়েছেন, বাইরে থেকে ফিরে কেউ গৃহবন্দি না থেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরও আইনি পদক্ষেপ করবে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সন্ধান এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে মেলেনি। কিন্তু দিনকয়েক আগে ভুটানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক মার্কিন নাগরিকের সন্ধান মেলার পর আলিপুরদুয়ারে সতর্কতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই সেই সতর্কতাও আরও বাড়তে থাকে।

তবে এই ক্ষেত্রে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন এমন অনেক মানুষ, যাঁরা বছরভর ভিন রাজ্যে কর্মরত। এই মানুষদের একটা বড় অংশ জেলার চা বাগান এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু তাঁদের কর্মক্ষেত্রের রাজ্যগুলির বাসিন্দারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে শুরু করায় তাঁরা আপাতত দ্রুত বাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু অভিযোগ, তাঁদের অনেকের খোঁজ জানতেই পারছে না প্রশাসন। যাঁদের খোঁজ মিলছে তাঁদের অনেকেই হোম কোয়রান্টিনে থাকছেন না। ফলে রবিবার কালচিনির সুহাসিনী চা বাগানের বাসিন্দা এক যুবক ও দুই যুবতীকে পুলিশের সাহায্যে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। সোমবারও ওই ব্লকেরই এক চা বাগান এলাকার বাসিন্দাকে ফালাকাটার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

কালচিনির বিডিও ভূষণ শেরপা বলেন, ‘‘যাঁদের হোম কোয়রান্টিনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা তা পালন করছে কিনা সেটা পুলিশ দেখবে। আর কাউকে নির্দেশ অমান্য করতে দেখা গেলেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করবে।’’ আলিপুরদুয়ারের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ সকলকে মানতে হবে। না মানলে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আইন অনুযায়ী কড়া পদক্ষেপ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement