নবান্নে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার এ কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দেন, পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়িতেই থাকুন। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কাজ করবেন। যদি প্রয়োজন হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের মতো করে বেতনের বিল তৈরি এবং অন্য জরুরি প্রশাসনিক কাজ করবে। এরই মধ্যে আজ, মঙ্গলবার উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণার পরে শিক্ষা দফতর থেকে যে-নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেটিকে ঘিরে তুমুল বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বলা হয়েছিল, স্কুলশিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষায় ‘ক্লাস সাসপেন্ড’ থাকবে। শিক্ষা শিবিরে প্রশ্ন ওঠে, ‘ক্লাস সাসপেন্ড’ থাকার অর্থ কি শুধু পড়ুয়ারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন না, নাকি সকলেরই ছুটি? শিক্ষামন্ত্রী সে-দিনই জানান, পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদেরও স্কুলে আসতে বারণ করা হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় যাঁদের নজরদারির কথা, তাঁরা স্কুলে যাবেন। অন্যেরা বাড়িতে থাকুন। মাধ্যমিকের খাতা দেখুন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মী-আধিকারিকেরা কী করবেন, সেই বিষয়েও বিভ্রান্তি ছড়ায়। তার পরে আবার একটি নির্দেশ বেরোয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ রাখার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, পরে দেওয়া সেই নির্দেশে তা মানতে বলা হয়।
সোমবার অনেক কলেজেই শিক্ষকেরা হাজিরা দিয়েছেন। কোথাও সরকারি নির্দেশ নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে, আবার কোথাও অফিসে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য আসতে হয়েছে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানান, মার্চে সরকারি অনুদান খরচের হিসেব জমা দিতে হয়। সেই জন্য প্রশাসনিক কর্মী, বিভিন্ন বিভাগের কিছু শিক্ষিকাকে আসতেই হচ্ছে।
মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানান, এ দিন পর্যন্ত শিক্ষা দফতরের দ্বিতীয় নির্দেশ সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। শিক্ষকেরা অনেকেই এসেছিলেন। জরুরি কাজ ছাড়া আসতে বারণ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু রাজ্যের কলেজগুলির এমন পরিকাঠামো নেই যে, বাড়ি থেকে সব কাজ করা যাবে। নিউ আলিপুর কলেজে অবশ্য সব কাজই বন্ধ রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া কলেজে আসা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার থেকে সরকার স্কুল ছুটির কথা ঘোষণা করলেও অনেক স্কুলে শিক্ষকেরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরদারির জন্য বাইরেও গিয়েছেন। উত্তর কলকাতার গোয়াবাগানের কাছে ভবতারণ সরকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জনকুমার জানা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষক-সহ কয়েক জনকে স্কুলে আসতে হয়েছে। এক জন শিক্ষক অবসর নেবেন। তাঁর কিছু কাগজপত্র তৈরি করার জন্য
স্কুলে এসেছি। আরও কিছু কাজ আছে।’’ অঞ্জনবাবু জানান, টানা ছুটি থাকলেও স্কুলে কোনও কাজ হলে তাঁদের আসতে হবে। ওই স্কুল সংলগ্ন পাশে বাড়িতেই মিড-ডে মিলের রান্না হয়। সেখানকার এক কর্মী জানান, এ দিন থেকেই এখানে মিড-ডে মিল রান্না পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হিন্দু হস্টেলের আবাসিকেরা এ দিনও ডিন অব স্টুডেন্টসের ঘরের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যেরা এ দিন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে জানান, সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে। তাঁদেরও সকলকে ছুটি দিতে হবে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বহু যন্ত্রের রোজ দেখভাল করতে হয়। অনেকের জরুরি গবেষণা থাকে। তাই কিছু শিক্ষককে আসতেই হচ্ছে।