coronavirus

রাজপথের চেহারা হার মানাল ধর্মঘটকে, সংক্রমণ এড়াতে মরিয়া জনতা সামিল কার্ফু-এ

কলকাতা-সহ রাজ্যের জনশূন্য চেহারা হার মানাবে যে কোনও ধর্মঘটের দিনকে। উত্তরের ঘোলা সোদপুর থেকে দক্ষিণের বালিগঞ্জ। অথবা যশোর রোড থেকে বেহালার ঠাকুরপুকুর। সর্বত্র কার্ফু পালন করছে করোনাভাইরাস রুখতে মরিয়া শহরবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ১২:২৯
Share:

রবিবার সকাল থেকেই জনতা কার্ফু-এ সামিল কলকাতা—নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রীর ডাকে জনতা কার্ফু-এ আমজনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিল। রবিবার ভোর থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের জনশূন্য চেহারা হার মানাবে যে কোনও ধর্মঘটের দিনকে।

Advertisement

উত্তরের ঘোলা সোদপুর থেকে দক্ষিণের বালিগঞ্জ। অথবা যশোর রোড থেকে বেহালার ঠাকুরপুকুর। সর্বত্র কার্ফু পালন করছে করোনাভাইরাস রুখতে মরিয়া শহরবাসী।

সকাল ৭

Advertisement

কার্যত জনশূন্য বর্ধমান লোকাল। হাতে গোনা তিন চার জন যাত্রী হুগলি স্টেশনে। উধাও চেনা ব্যস্ততা।

জনশূন্য বর্ধমান লোকালের কামরা ও হুগলি স্টেশন—নিজস্ব চিত্র।

হাওড়া ও শিয়ালদা, দু’টি স্টেশনই অস্বাভাবিক জনবিরল। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু লোকাল ট্রেন। যে কয়েকটি লোকাল ট্রেন চলছে, সেগুলিও অনিয়মিত। বন্ধ রয়েছে প্যাসেঞ্জার ও দূরপাল্লার ট্রেন। হাতে গোনা কিছু সরকারি বাস পথে নামলেও কার্যত দেখাই যায়নি বেসরকারি বাস ও মিনিবাস।

বাতিল দূরপাল্লার ট্রেন—নিজস্ব চিত্র।

সকাল ৮

খাঁ খাঁ করছে ঘোলা সোদপুর রোড। ফাঁকা বি টি রোড-ও। দু’ একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া দেখা পাওয়া যায়নি কোনও গণপরিবহণের। শুনশান সোদপুর রেলস্টেশনও। স্টেশন লাগোয়া বাজার বন্ধ। খোলেনি কোনও দোকানপাট। কিছু চায়ের দোকানে ঝাঁপ খুললেও চোখে পড়েনি রবিবারের আড্ডা।

ব্যস্ততাহীন সোদপুর স্টেশন—নিজস্ব চিত্র।

সদাব্যস্ত সোদপুর রোড, মধ্যমগ্রাম চৌমাথাও ধরা দিয়েছে জনতা কার্ফুর ছবিতে। অন্যদিনের ব্যস্ততা সেখানে নেই। যে কোনও হরতালের দিনের থেকেও কম ভিড় উত্তর শহরতলির এই অংশে।

সকাল ৯

আমজনতার ঘরবন্দি ছবি বেহালাতেও। বকুলতলা, শকুন্তলা পার্ক, ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, সখের বাজার, ঠাকুরপুকুর-সহ সব জায়গাতেই বন্ধ বাজার। এমনকি, বন্ধ রয়েছে বেশকিছু ওষুধের দোকানও। করোনাভাইরাস এড়াতে বাইরে বার হননি স্বাস্থ্যসচেতন প্রার্তভ্রমণকারীরাও।

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে মৃত্যু আরও এক, দেশে আক্রান্ত বেড়ে ৩২৪, লকডাউন বহু রাজ্যে: করোনা আপডেট এক নজরে

ক্রেতার অভাবে বসেনি বাজারও—নিজস্ব চিত্র।

সকাল ১০

জনশূন্য বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাটও। বন্ধ রয়েছে বাজারের বেশির ভাগ দোকান। দু’একটি দোকান খুললে সাময়িক ভিড় করেছেন ক্রেতারা। বেশি সময় ধরে রবিবারের দীর্ঘ বাজারের বদলে চটজলদি কিছু কিনে নিয়ে ফের ঘরবন্দি হওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।

জনবিরল রাসবিহারী অ্যাভিনিউ—নিজস্ব চিত্র।

খাসির মাংসের দোকান এবং তরিতরকারির দোকান অবশ্য বন্ধই ছিল। আবার অনেক জায়গায় বাজার খুললেও ক্রেতার অভাবে মাছি তাড়িয়েছেন বিক্রেতা। আবার স্বল্প হলেও কোথাও কোথাও ধরা পড়েছে অন্য ছবি-ও। সকাল থেকেই মাংসের দোকানে লম্বা লাইন ছিল।

আরও পড়ুন: গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু? মানতে নারাজ কেন্দ্র

জনতা কার্ফু চলছে কলকাতা জুড়ে—নিজস্ব চিত্র।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশবাসীর কাছে সময় চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথম পর্যায়ে ১৪ ঘণ্টা। গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে জনতার কাছে স্বেচ্ছায় ঘর বন্দি থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, সামাজিক দূরত্ব তৈরি করতেই মানুষের স্বার্থে ওই জনতা কার্ফু ডাকা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনতা কার্ফুর সিদ্ধান্ত একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।

জনশূন্য চিৎপুর রেলস্টেশন লাগোয়া চত্বরও—নিজস্ব চিত্র।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, যে গতিতে ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে, তাতে সংক্রমণের জাল ছিন্ন করাটাই এখন সরকারের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর তা কার্যকর করতে গেলে এ ভাবে ‘লকডাউন’ করা ছাড়া কোনও উপায় খোলা নেই বলেই মত স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লভ আগরওয়াল বলেন, ‘‘জনতা কার্ফুকে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ হিসাবে দেখা উচিত। বাড়িতে থাকলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো অনেকটাই আটকানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে নতুন করে সংক্রমণ রোখাটাই চ্যালেঞ্জ।’’

করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পেতে গৃহবন্দি কলকাতাবাসী—নিজস্ব চিত্র।

তবে সে ক্ষেত্রে রবিবারে ১৪ ঘণ্টা যথেষ্ট নয় বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকেরই মতে, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যেমন টানা লকডাউনের পথে হেঁটে সাফল্য পেয়েছে, সে পথই নিতে হবে ভারতকে। দরকারে পরপর কয়েক দিন ধারাবাহিক লকডাউনের পথে হাঁটতে হবে ভারতকে। দেশ যে আগামী দিনে সেই পথে হাঁটতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইসিএমআরের পদস্থ কর্তা রমন গঙ্গাখেদকর। তাঁর কথায়, ‘‘আগামিকালের জনতা কার্ফুর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। বোঝা যাবে, কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে। কোন ক্ষেত্রে আরও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন।’’ স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, ভবিষ্যতে এক সঙ্গে পরপর টানা কয়েক দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত কালকের পরে নেওয়া হতে পারে। কারণ ভারতের মতো জনঘনত্বের দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন না হলে ওই সংক্রমণ কখনই এড়ানো সম্ভব হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement