ছবি পিটিআই।
করোনা-কামড় যত জোরদারই হোক, হুড়োহুড়ি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার কোনও দরকার নেই। কারণ, বাজার বন্ধ হচ্ছে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভয় পেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করার দরকার নেই। দোকান খোলা থাকবে। পুলিশকে বলব, সব বাজারে আইসি ও এসপি-রা নজর রাখুন, কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করছেন কি না। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে মজুতদারের বিরুদ্ধে।’’
মমতার আশ্বাস সত্ত্বেও অবশ্য আতঙ্ক কাটেনি অনেকেরই। উত্তরের মানিকতলা বাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণে গড়িয়াহাট বাজার খুচরো বাজারে অনেক ক্রেতা বৃহস্পতিবার ভিড় করেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখার জন্য। বাগুইআটি বাজারে অনিমেষ বসু নামে এক ক্রেতার প্রশ্ন, ‘‘আগাম নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করছি। করোনাভাইরাসের দাপটে শুনছি নাকি বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। কথাটা কি ঠিক?’’
শুধু অনিমেষবাবু নয়, শহর জুড়ে অনেকের প্রশ্ন এটাই। তাঁরা শুনেছেন, করোনার জেরে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বাজার বন্ধ হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে। তাই জিনিস মজুত করা দরকার। যদিও রাজ্য প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে এমন গুজবে কান দেওয়ার কোনও দরকার নেই।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কমল দে বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙের মতো গরমের আনাজের যথেষ্ট জোগান রয়েছে। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা আনাজের উপরে এখন নির্ভরশীলতা নেই বললেই চলে। তাই ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রাক কম এলেও অসুবিধা হবে না।’’
অভিযোগ, করোনার দোহাই দিয়ে বাজারের ফড়েদের একাংশ তৎপর হয়ে উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান খুচরো বাজারে কমে আসছে, তাদের গুদামে জিনিস কমে আসছে বলে প্রচার চালিয়ে খুচরো বাজারে দাম বাড়ানোর অসাধু চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোলে মার্কেটের কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, পাইকারি বাজারে পটল, ঢেড়সের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। যেটা এই মরসুমে স্বাভাবিক। কিন্তু খুচরো বাজারের (যেমন বাগুইআটি বাজার, গড়িয়াহাট বাজার বা মানিকতলা বাজার) কিছু দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। প্রশ্ন উঠছে, পাইকারি বাজারের থেকে খুচরো বাজারের দামে এত তফাত কেন?
শাহজাহান মোল্লা নামে এক খুচরো আনাজ বিক্রেতা বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারের থেকে খুচরো বাজারের দামে এতটা তফাত হওয়ার কথা নয় কোনও ভাবেই। কারণ, বাজারে যথেষ্ট জোগান রয়েছে। করোনার মধ্যে খুচরো বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যাতে লাগামছাড়া না-হয়, সেই জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে মাঝেমধ্যে বাজারগুলোতে হানা দেওয়া দরকার। তা হলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’’ মানিকতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী আবার বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও খারাপ হলে তখন বাজারের অবস্থা কী হবে, খুচরো বাজারে জোগান কতটা ঠিক থাকবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
ভিন্ রাজ্য থেকে ডিম কম এলেও চাহিদা কম থাকায় তার দামও এখনই বাড়ার কথা নয় বলে শিয়ালদহের ডিমপট্টির ব্যবসায়ীদের দাবি। মানিকতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল জানান, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রুই-কাতলার জোগান কম ঠিকই। তবে সার্বিক ভাবে মাছের চাহিদাও কমেছে। তাই দাম এখনও বাড়েনি। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বাজারে লোকই তো কমে গিয়েছে। সকাল ১০টার পরেই বাজার সুনসান। মাছ কেনার লোক কম। দাম বাড়বে কী ভাবে?’’