ছবি: এএফপি।
রাজ্য সরকারের ‘গা-ছাড়া মনোভাবের’ জন্য খাস কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউনের নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে পাঠানো একটি চিঠিতে অমিত শাহের মন্ত্রক অভিযোগ করেছে, শহরের কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন ভাঙা হচ্ছে। ফলে রাজ্যে ঝুঁকি বাড়ছে করোনা সংক্রমণের। এ ছাড়া, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রশাসন এখনও ধর্মীয় জমায়েত হওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে চলেছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে কেন্দ্র। লকডাউন যাঁরা ভাঙছেন, অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। প্রশাসন শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করেছে, তা সবিস্তার জানাতে নবান্নকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের চিঠিপ্রাপ্তি স্বীকার করে নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে একটু দেখে নিতে বলেছে। আর দিল্লির যেমন কাজ। ওরা যেমন লেখার তেমনই লিখেছে। এটা কোনও কমিউনাল ভাইরাস নয়। রোগ কখনও ধর্ম দেখে আসে না। পশ্চিমবঙ্গে এ ভাবে কোনও কাজ হয় না। এখানে সবার ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা। মহামারির সময়ে রাজনীতি করছে একটি দলের কিছু লোক আর আইটি সেল। আমরা সবটা দেখে নিচ্ছি। এই মহামারির সময়েও একটি দলের কিছু লোক রাজনীতি করে যাচ্ছে।’’
গোড়া থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লকডাউন ভাঙার একাধিক অভিযোগ জমা পড়ছিল কেন্দ্রের কাছে। গোটা দেশ যে ভাবে লকডাউন পালন করছে সে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনও যাতে রাজ্যে লকডাউনের নিয়ম পালন করে, সে জন্য গত ৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরে গতকাল ফের রাজ্যকে চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে লকডাউনের নিয়ম ক্রমশ লঘু করা হচ্ছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর দোকান ছাড়াও অন্য দোকান খোলার প্রশ্নে ছাড় দিয়েছে প্রশাসন। কলকাতার কিছু কিছু এলাকায় অনেকেই ভিড় করে বাজার করছেন। ফলে লকডাউনের সময়ে পারস্পরিক দূরত্ব পালন করার যে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষিত করা হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কলকাতার কিছু কিছু এলাকায় একাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে লোকে নিয়ম ভাঙছে। এতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আরও অভিযোগ করেছে যে, রাজ্য প্রশাসন এখনও ধর্মীয় জমায়েত হতে দিচ্ছে। রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে রেশন না-দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা রেশন বিলি করছেন এমন অভিযোগও জমা পড়েছে কেন্দ্রের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়বে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, দেশে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন যদি এখনও ধর্মীয় জমায়েত হতে দেখে কড়া পদক্ষেপ না-করে, তা হলে এর পরবর্তী দায় রাজ্যকেই নিতে হবে। ভোগান্তির শিকার হবেন গোটা রাজ্যের মানুষ। রাজ্য প্রশাসনের উচিত, এখন অন্তত ধর্ম না-দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে গোটা দেশের লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাবে।