ছবি রয়টার্স।
সিনিয়র চিকিৎসক বলতে মাত্র এক জন। তাঁর অধীনে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসক এবং ইন্টার্নেরা। এই নিয়েই বুধবার চলছিল বেলেঘাটা আইডি-র জরুরি বিভাগ। বিড়াল, কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা যেমন চলছে, তেমনই করোনা-আতঙ্কে মানুষজনকে ‘স্ক্রিনিং’-এর দায়িত্ব ওই চিকিৎসকের উপরেই ন্যস্ত। এর ফলেই এ দিন আইডি-তে আসা লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বেসরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার সুযোগ নেই কেন?
আইডি-র ডেপুটি সুপার, মাইক্রোবায়োলজিস্ট আশিস মান্নার বক্তব্য, এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মান বজায় রাখতে এবং পরীক্ষার ফল নিয়ে বিভ্রান্তি আটকাতে বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হিস্টোপ্যাথলজিস্ট সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, ‘পলিমেরাজ চেন রিঅ্যাকশন’-এর ক্ষেত্রে হাতেগোনা ল্যাবরেটরির দক্ষতা রয়েছে। তাই ঢালাও অনুমতি দেওয়া যায় না। যে-হেতু এই ধরনের পরীক্ষার ‘কিট’-এর দাম অনেক বেশি, তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার খরচও অনেক বেশি হতে পারে। ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট দেবকিশোর মণ্ডল জানান, সর্দি-জ্বর হলেই অনেকে পরীক্ষা করাতে ছুটছেন। সে-ক্ষেত্রে প্রচুর অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা হবে।
তবে করোনার দাপট যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মান বজায় রেখে কিছু বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতেও করোনা পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যেই বেসরকারি ল্যাবগুলিকে প্রস্তুতি শুরু করতে বলেছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর টেস্টের নির্দেশিকা মেনে চিকিৎসক প্রেসক্রাইব করলেই ল্যাবরেটরি টেস্ট করা হবে। যে-হেতু নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দেশিকা সংশোধন করা হচ্ছে, তাই শেষ নির্দেশিকা মেনে কাজ করতে হবে।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলি নিয়ম অনুযায়ী প্রাইমার্স, রিএজেন্ট সংগ্রহ করলেই আইসিএমআর তাদের জন্য এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) চালু করবে। পরীক্ষার জন্য ‘কিট’ আইসিএমআর-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বেঁধে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী হতে হবে। সন্দেহভাজন রোগীর থেকে নমুনা সংগ্রহের সময় ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনমাফিক বায়োসেফটি, বায়োসিকিয়োরিটি সাবধানতার ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই রোগের জন্য আলাদা নমুনা সংগ্রহের জায়গা তৈরি করে যেতে পারে। আইসিএমআর বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলিকে নিখরচায় পরীক্ষা করার আবেদন জানিয়েছে। সরকারি ল্যাবরেটরিতে নিখরচায় পরীক্ষা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার এনএবিএল-স্বীকৃত কিছু ল্যাবরেটরিকে পরীক্ষার অনুমতি দিতে পারে। অনুমতি পেতে পারে কিছু সরকারি হাসপাতালও। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক প্রতীপ কুণ্ডু জানান, তাঁদের এক দল কর্মীকে করোনা পরীক্ষার প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে। পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির দল এসে ট্রপিক্যালের পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি ‘ক্যালিব্রেট’ করবেন।