Coronavirus

আতঙ্কের ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল আইডি

আতঙ্কের জেরে সাধারণ মানুষও লাইনে ভিড় করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৫
Share:

করোনা-সংক্রমণের ভয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষার লম্বা লাইন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। পরীক্ষা করাতে এসে ক্লান্তিতে রাস্তাতেই শুয়ে এক তরুণী। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সকাল ১০টায় দুই সন্তানকে নিয়ে করোনা-পরীক্ষার জন্য বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগরপাড়ার আবুধাবি-ফেরত বধূ। বিকেল ৫টাতেও জরুরি বিভাগের কোলাপসিব্‌ল গেট পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি তিনি। দুপুরে কারও খাওয়াদাওয়া হয়নি। অসহায় মা বিকেলে মেজাজ হারিয়ে পুলিশকে বললেন, ‘‘আর কত ক্ষণ?’’

Advertisement

দক্ষিণ দমদমের শ্যামনগরের বাসিন্দা এক যুবক কাতার থেকে ফিরে ‘হোম কোয়রান্টিন’ বা গৃহ-পর্যবেক্ষণে ছিলেন। অভিযোগ, সকালে স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুগামীরা জানান, আইডি থেকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ নিয়ে আসতে হবে। চাপে পড়ে ছেলেকে নিয়ে আইডি ছোটেন বাবা।

বৃহস্পতিবার এমন অনেকেই রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত নোডাল হাসপাতাল আইডি-তে হাজির হন। অপ্রতুল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সেই জনতার হয়রানি আটকানো যায়নি। দফায় দফায় ক্ষোভ প্রদর্শন করলেন অনেকে। অধৈর্য হয়ে জরুরি বিভাগের ভিতরে উত্তেজিত জনতার হামলে পড়া দেখে আঁতকে উঠলেন আইডি-চত্বরে নাইসেডের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়) গবেষকেরা। উপাধ্যক্ষ তথা সুপার আশিস মান্নাকে গবেষকেরা জানান, অন্তত করোনা প্রভাবিত দেশ থেকে আগতদের আলাদা করা যায় না? আতঙ্কের জেরে সাধারণ মানুষও লাইনে ভিড় করছেন। সন্দেহভাজনদের সঙ্গে একই লাইনে এ ভাবে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়ানো তো রীতিমতো বিপজ্জনক!

Advertisement

কিছু আগে সুপার নিজেও জরুরি বিভাগের সামনে স্বগতোক্তি করে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বিদেশাগতদের যদি কোনও উপসর্গ না-থাকে, তাঁদের আইডি-তে আসার দরকার নেই। তার জন্য রাজারহাটের কোয়রান্টিন আছে। তবু সকলে আইডি-তে চলে আসছেন। আইডি-র চিকিৎসকদের একাংশ জানান, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এত দিনে পৃথক আইসোলেশন কেন্দ্র চালু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এসএসকেএম-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে আইডি-তে রোগী রেফার করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল থেকেও করোনা-স্ক্রিনিং লিখে আইডি-তে পাঠানো হচ্ছে। তার উপরে সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলেও করোনা-স্ক্রিনিংয়ের লাইনে দাঁড়ানো অব্যাহত।

এ-সবের মধ্যে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তথ্য-বিভ্রান্তি। রাজারহাটের এক আবাসনের বাসিন্দা সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন করোনা-স্ক্রিনিংয়ের জন্য। তিনি বলেন, ‘‘২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আমেরিকা থেকে এসেছি। বুধবার ছ’জন পুলিশ এসে বলল, আইডি থেকেই সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে!’’ অভিযোগের ভিড়ে এ দিন অন্তত ওই মহিলার বক্তব্য যাচাইয়ের সুযোগ মেলেনি। তবে রাজ্যে প্রথম আক্রান্তের হদিস মেলার পরে স্ক্রিনিংয়ের লাইন দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি পরিকাঠামোগত বেশ কিছু খামতি এ দিন সামনে এসেছে।

সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নাইসেডে বুধবার রাত পর্যন্ত ১০৭ জনের লালারসের পরীক্ষা হয়েছে। এসএসকেএমে ১৪ মার্চ পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এ-পর্যন্ত মেরেকেটে ২০ জনের পরীক্ষা হয়েছে। নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন, এসএসকেএমে প্রায় কোনও পরীক্ষাই হচ্ছে না। ওদের ওখান থেকেও আমাদের রোগী রেফার করে দিচ্ছে। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না।’’ এসএসকেএমের মাইক্রোবায়োলজির চিকিৎসক রাজা রায় বলেন, ‘‘এখনও খুব বেশি রোগী আসছে না। তবে আইডি-তে রোগী রেফার করছি না।’’

নবান্নের বৈঠক সেরে আইডি-র অধ্যক্ষা অণিমা হালদার জানান, তিন জন মেডিক্যাল অফিসার কাজে যোগ দিচ্ছেন। কারও যাতে হয়রানি না-হয়, সেই জন্য মাইকে প্রচার এবং স্বাস্থ্য ভবনের তরফে একটি শিবির খোলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের দু’জন ছাত্রীকে করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে ভর্তি করানো হয়। দুই ছাত্রীর মধ্যে এক জন সম্প্রতি কেরলে শিক্ষা সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এটা জানার পরে ওই সম্মেলনে এ রাজ্য থেকে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য ভবন। তাঁদের মধ্যে এক জন ডেন্টাল ছাত্রীর দিদি আবার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। তিনিও নিজেকে হোম কোয়রান্টিনে রেখেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement