Coronavirus

মহুয়া মৈত্র বনাম ১৪ প্রবাসী চিকিৎসক: রণাঙ্গনে বাংলার বিদ্বজ্জনেরাও

সাংসদের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগও তুলেছেন এই বিশিষ্টজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ১৫:৪৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

১৪ জন প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী-চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। ওই বিজ্ঞানী-চিকিৎসকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এ বার এই ইস্যুতে বিবৃতি দিলেন বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিদ্বজ্জনদের একাংশ। মহুয়া মৈত্রের নাম না করেও ‘এক সাংসদ’ উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে তাঁদের অভিযোগ, সাংসদের এই ক্ষোভপ্রকাশ অপরিণত, অবৈজ্ঞানিক এবং প্রতিশোধমূলক।

Advertisement

সাংসদের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগও তুলেছেন এই বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা লিখেছেন, ‘‘এই সাংসদই সংসদে বলেছিলেন, সরকারের সমালোচনা করা মানেই দেশের বিরোধিতা করা নয় এবং বাক স্বাধীনতার অধিকার হরণ করা ফ্যাসিস্ত মনোভাবের লক্ষণ। তা হলে কেন রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনাকে রাজ্যবিরোধী বলা হবে।’’ তা ছাড়া ওই চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা “দেশে বসবাস করেন না বলে তাঁরা রাজ্যের কি সমালোচনাও করতে পারবেন না?”— এ প্রশ্নও তুলেছেন বিদ্বজ্জনেরা।

বিবৃতির সই করেছেন পরিচালক তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, সঙ্গীতশিল্পী দেবজ্যোতি মিশ্র, অনিন্দ্য বসু, উপল সেনগুপ্ত, কবি মন্দাক্রান্তা সেন, চিত্রশিল্পী সমীর আইচ, ওয়াসিম কপূর, রাজ্যের প্রাক্তন আমলা অর্ধেন্দু সেন, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে।

Advertisement

এই বিতর্কের সূত্রপাত বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর একটি খোলা চিঠিকে ঘিরে। পত্রলেখকরা ইংল্যান্ড, আমেরিকার মতো পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে গবেষণা বা চিকিৎসার কাজে নিযুক্ত। তাঁরা খোলা চিঠিতে অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্য সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা জানাচ্ছে না। সেটা বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

আরও পডু়ন: বঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৫, এনআরএসে সংক্রমিত ৯

এর জবাবে কৃষ্ণনগরের সাংসদ টুইটারে পাল্টা প্রশ্ন করেন ওই পত্রলেখকদের। তাঁরা যে দেশে থাকেন, সেই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার সরকারকে কেন চিঠি লিখছেন না— সেই প্রশ্ন তোলেন মহুয়া। ওই বিজ্ঞানী-চিকিৎসরা যে সব দেশে থাকেন, সেখানকার সঙ্গে এ রাজ্যের এবং এ দেশের করোনা সংক্রমণ চিত্রের তুলনা করে মহয়া লেখেন— ওই উন্নত দেশগুলির তুলনায় এখানে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা অনেক ভাল ভাবে হচ্ছে।

বিদ্বজ্জনদের প্রশ্ন, ‘‘বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিত্সা কি কারও বসবাসের এলাকা বা দেশের গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা যায়?’’ রাজ্য সরকার কোভিড-১৯ এর মোকাবিলায় ওয়ার্ল্ড অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন করেছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি কমিটিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বাকিদের অধিকাংশই প্রবাসী। তা হলে এই দ্বিচারিতা কেন?’’

মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন, ওই পত্রলেখক বিজ্ঞানী-চিকিৎসকরা সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের চিঠি লিখতে পারতেন। বিবৃতিতে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ‘‘কে কাকে চিঠি লিখবেন, সেটা তাঁর এক্তিয়ার এবং প্রাধান্য। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশেরই পরিবারের লোকজন পশ্চিমবঙ্গে থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা যে দেশে থাকেন, তার চেয়ে রাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হবেন।’’

আরও পড়ুন: ‘ডাক্তাররা ধরেই নিয়েছিলেন আমি মরছি’, মুখ খুললেন বরিস জনসন

ওই খোলাচিঠির প্রেরকরা যে বিভিন্ন দেশে নিজের নিজের ক্ষেত্রে স্বনামধন্য সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতি দেওয়া এই বিদ্বজ্জনদের বক্তব্য, ‘‘এই মহামারির সময়ে এক জন সাংসদের এ হেন আচরণে আমরা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছি। এটা অনভিপ্রেত, এটা প্রকৃত ঘটনা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা এবং মহামারি নিয়ে অযথা রাজনীতি করা হচ্ছে। আমরা সন্ত্রস্ত, যে সব প্রবাসী বাঙালি সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন, একজন সাংসদ হয়ে এ ভাবে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের সম্মানহানি করতে পারেন।’’ সব শেষে তাঁদের পরামর্শ, ‘‘এই স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় রাজ্য সরকারের উচিত দোষারোপ-অভিযোগের ঊর্ধ্বে উঠে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement