Coronavirus

বিয়েতে বিদেশি-যোগ? বৃদ্ধের সংস্রবে অনেকে

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৩ মার্চ এগরা পুরসভা এলাকার এক হোমিয়ো চিকিৎসকের ছেলের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০৪:২৯
Share:

ঠাসাঠাসি: করোনা সংক্রমণ রুখতে জোর দেওয়া হচ্ছে সামাজিক দূরত্বে। ভিন‌্ রাজ্য থেকে ফেরা অন্তত পঞ্চাশ জনের একটি দলকে এ ভাবে নিয়ে যাওয়া হল আসানসোলে। বৃহস্পতিবার শহরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১০। পঞ্চসায়র থানা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কলকাতার ৬৬ বছর বয়সি এক বৃদ্ধকে বৃহস্পতিবার রাতে ভেন্টিলেটরে দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসে ‘হাইরিস্ক’-এর তালিকায় রয়েছেন ২১ জন। আজ, শুক্রবার তাঁর স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, নাতনি ও পরিচারিকাকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো হবে।

Advertisement

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৩ মার্চ এগরা পুরসভা এলাকার এক হোমিয়ো চিকিৎসকের ছেলের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা। বালেশ্বর, ভুবনেশ্বর, রৌরকেলা, হায়দরাবাদ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বোকারো, মধ্যপ্রদেশের আমন্ত্রিতেরা ছাড়াও আমেরিকা ও সিঙ্গাপুর থেকে ওই চিকিৎসকের চার বন্ধু এসেছিলেন। ওই চিকিৎসক আক্রান্ত বৃদ্ধের ভায়রাভাই। বিয়ে উপলক্ষে স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, নাতনি এবং হাওড়ার এক পরিচিতকে নিয়ে ১২ মার্চ গাড়িতে এগরায় পৌঁছে একটি হোটেলে ওঠেন ওই বৃদ্ধ। বৌভাতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি, স্কুলশিক্ষক, নেতা-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি হাজির ছিলেন। ১৬ মার্চ বিদেশি অতিথিরা ফিরে যান। সে-দিনই ওই বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে যান। দিঘার হোটেলে বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন ন’জনের খোঁজ মিলেছে ইতিমধ্যেই। আরও ১৪ জনের খোঁজ চলছে।

১৭ মার্চ বৃদ্ধের জ্বর আসে। ১৮ মার্চ শুরু হয় প্রবল শ্বাসকষ্ট। দিঘা থেকে ফিরে ১৮ থেকে ২২ মার্চ এগরায় আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন কোল ইন্ডিয়ার ওই প্রাক্তন কর্মী। ২২ মার্চ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় পরের দিন বৃদ্ধকে ভর্তি করানো হয় পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার তাঁর লালারসের নমুনা এসএসকেএম হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তা সিঞ্চন ভট্টাচার্য জানান, প্রথম বারের পরীক্ষায় নিশ্চিত না-হয়ে দ্বিতীয় বার নমুনা চেয়ে পাঠায় এসএসকেএম। বৃদ্ধ যে করোনা-পজ়িটিভ, তা নিশ্চিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার রাতে।

Advertisement

এ দিন সকালে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এগরা ও দিঘার যে-দু’টি হোটেলে ওই বৃদ্ধ উঠেছিলেন, সেগুলি সিল করে দেয় স্বাস্থ্য দফতর। বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা এগরার হোমিয়ো চিকিৎসকের গোটা পরিবার, হোটেলের পরিচারিকা, দুই হাতুড়ে চিকিৎসক এবং প্রীতিভোজের কেটারিং কর্মীদের হোম আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২১ জন বৃদ্ধের খুব কাছাকাছি এসেছিলেন। বেসরকারি হাসপাতাল জানায়, উপসর্গ দেখা দেওয়ার ছ’দিন পরে বৃদ্ধ তাদের কাছে আসেন। ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোমিয়ো চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওঁর আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল। বিদেশ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ওঁর আলাপ হয়নি। আমাদের দেশে করোনা নিয়ে তখন জরুরি অবস্থা ছিল না। তাই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’’

বৃদ্ধের ছেলের অফিসের দুই কর্মী মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইটালি থেকে ফেরেন। স্বাভাবিক ভাবে, ইটালি নাকি আমেরিকা— কোন দেশ-যোগে বৃদ্ধ আক্রান্ত হলেন, তা খুঁজে বার করতে চাইছে স্বাস্থ্য ভবন। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বৃদ্ধের সংস্রবে আসা লোকের তালিকা যে-ভাবে বেড়ে চলেছে, সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement