অঞ্জু ঘোষ। ফাইল চিত্র।
তিনি কি আদৌ ভারতীয় নাগরিক? নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে যে নথি তিনি পেশ করছেন, তা কি আদৌ বৈধ?
বিজেপিতে যোগ দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ খ্যাত অঞ্জু ঘোষ। এক দিকে শাসক দলের দাবি, বিজেপি বাংলাদেশি নাগরিককে দলের সদস্য পদ দিয়েছে। অন্য দিকে বিজেপির দাবি, অঞ্জু ভারতীয় নাগরিক। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে অঞ্জুর পক্ষে একাধিক নথি পেশ করেছে বিজেপি। কিন্তু সেই নথিতে একাধিক অসঙ্গতি আছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
এ দিন বিজেপি অঞ্জুর জন্মের শংসাপত্র, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং পাসপোর্টের কপি দেখিয়ে দাবি করে, অভিনেত্রী ভারতীয়।
অঞ্জুর দাবি ১৯৬৬ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জন্ম। এর পক্ষে বিজেপি পেশ করেছে ২০০৩ সালে কলকাতা পুরসভা থেকে প্রকাশিত তাঁর জন্মের শংসাপত্র। প্রশ্ন উঠছে, ১৯৬৬ সালে যাঁর জন্ম, তাঁর জন্মের শংসাপত্র ২০০৩ সালে দেওয়া হল কেন? এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের একাধিক খবরের কাগজের সাক্ষাৎকারে দেখা যাচ্ছে অঞ্জু বাংলাদেশকেই তাঁর ‘মাতৃভূমি’ বলে দাবি করছেন। এমনকি, একটি সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকের ভুল শুধরে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমার জন্ম কিন্তু চট্টগ্রামে নয়, ফরিদপুরে। তবে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।’’ তা হলে সত্য কী? জন্মের শংসাপত্র, না কি তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকারের বয়ান।
এ ছাড়াও কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, অনলাইনে অঞ্জুর জন্মের শংসাপত্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সঙ্গে কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলছে না। একই নামে দু’টি রেজিস্ট্রেশনও পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ।
অঞ্জুর যে পাসপোর্ট দেখানো হয়েছে, সেটির মেয়াদ শুরুর তারিখ ২০১৮ সালে। যে অভিনেত্রী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ এবং ভারতে অভিনয় করেছেন, তাঁর পাসপোর্ট ২০১৮ সালের হয় কী করে? বিজেপির দাবি, এটি তাঁর শেষ জারি হওয়া পাসপোর্ট। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তাঁর প্রথম পাসপোর্টের তথ্য কোথায়? যদি তিনি নাগরিকত্ব বদলে থাকেন, তা হলে কলকাতার জন্মের শংসাপত্র আসে কোথা থেকে?
বিজেপি তাঁর যে ভোটার কার্ড দাখিল করেছে, সেটি ইস্যুর তারিখ ২০০২ সাল। অঞ্জু যদি ভারতেরই নাগরিক হবেন, তা হলে ভোটার কার্ড পেতে এত সময় লাগল কেন?
তাঁর যে প্যান কার্ড দেওয়া হয়েছে, সেখানে আবার জন্ম সাল ১৯৬৭। প্রশ্ন উঠছে, এক এক জায়গায় তাঁর এক এক রকম জন্মের তারিখ কেন?
বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, অঞ্জু ঘোষ ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনের সূত্রও জানিয়েছে, বাংলাদেশি নায়িকার ভারতীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই।
ভোটের প্রচারের সময় তৃণমূল বাংলাদেশের অভিনেতাদের নিয়ে এসে প্রচারে ব্যবহার করছেন, এমন অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের দুই অভিনেতার ভিসা বাতিল করা হয়েছিল। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে, এ দিন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, ‘‘দেশের মানুষ আর বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না। তাই ও পার বাংলা থেকে ওদের লোক নিয়ে আসতে হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের অনেকেই সে সময় জন্মের শংসাপত্র পাননি। পরে নির্দিষ্ট নথি দেখিয়ে তাঁরা তা পুরসভা থেকে তা নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এটা নিয়ে বিতর্ক করার অর্থ হয় না।’’ দিলীপবাবুর দাবি, উনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অভিনয় করেছেন। পরে দেশে ফিরে ভোটার কার্ড নিয়েছেন। এটাও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।