Hindu Mahasabha

‘মহাত্মা গান্ধীর অপমান’! গ্রেফতার চাইল বিজেপি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা, বলছে তৃণমূল

হিন্দু মহাসভার সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “নো অবজেকশন নিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে গান্ধীকে অসুর রূপে দেখানো হয়নি। এই মিল নিতান্তই কাকতালীয়।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১১:২৮
Share:

হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজো নিয়ে বিতর্ক। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

দক্ষিণ কলকাতার রুবি মোড়ে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজোকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলার রাজনীতিও। হিন্দু মহাসভার পুজো মণ্ডপে যে দুর্গার মূর্তি পুজো করা হচ্ছে, সেখানে মহাত্মা গান্ধীর আদলে তৈরি করা হয়েছে মহিষাসুরকে। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। যদিও পরে পুলিশ এসে অসুর বদলে গিয়েছে।

Advertisement

দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে আপামর বাঙালির আনন্দ, আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। বাঙালিরা মহিষাসুরকে যে আদলে দেখে অভ্যস্ত, হিন্দু মহাসভা ঠিক উল্টো পথে হেঁটে গান্ধীজির আদলে রূপ দিয়েছে মহিষাসুরকে। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক, উঠছে সমালোচনার ঝড়।

হিন্দু মহাসভার সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “নো অবজেকশন নিয়ে পুজো করা হচ্ছে। তবে গান্ধীকে অসুর রূপে দেখানো হয়নি। এই মিল নিতান্তই কাকতালীয়। এটাও আবার অস্বীকার করছি না যে, মোহনদাস কর্মচাঁদ গান্ধীকে যে জাতির জনক বা জাতির পিতা বলা হয় ঠিকই, কিন্তু আমরা তা মানি না। আমরা নেতাজিকে শ্রদ্ধা করি।” তিনি আরও বলেন, “আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছি যে, আপনি তো বলছেন, গান্ধীর অনুপ্রেরণায় আট বছর সরকার চালিয়েছেন, এটা অবিশ্বাস্য। তার কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য যে মানুষটির নাম জড়িয়েছে, কংগ্রেস থেকে যে ভাবে নেতাজিকে বিতাড়িত করা হয়েছে, ভগৎ সিংহের ফাঁসির ক্ষেত্রে গান্ধীর অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ভূমিকা রয়েছে, সেই মানুষটি জাতির জনক কেন হতে যাবে।”

Advertisement

হিন্দু মহাসভার এই পুজোর বিতর্ক নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, “এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। গান্ধীজি আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে এক জন। তাঁকে এ ভাবে অসুররূপে দেখানো হয়েছে, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।”

বিজেপি রাজ্যকে ভাগ করার চেষ্টা করছে, রাজ্যের অনুদান দিচ্ছে না এবং গান্ধীকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদী, গান্ধীমুক্ত ভারত চাই— বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু মহাসভার এই স্লোগান নিয়ে সুকান্তকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তখন তিনি বলেন, “এই সব পাগলদের কাজ। এদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পুলিশ গ্রেফতার করে কিছু জেলে রেখে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

হিন্দু মহাসভার সভাপতি চন্দ্রচূড়ের অবশ্য দাবি, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কসবা থানার পুলিশ এসে জোর করে অসুরের মূর্তিতে চুল লাগিয়ে দিয়েছে। না হলে পুজো বিসর্জন দিয়ে দিতে হবে বলে পুলিশ তাঁদের জানিয়েছিল। তাঁর কথায়, “ওদের উপর নাকি কেন্দ্র থেকে প্রচুর চাপ দেওয়া হচ্ছে। লালবাজারেও নাকি চাপ দেওয়া হয়েছে। আমার কাছেও ফোন এসেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে। বলা হয়েছে, ‘গান্ধীর ব্যাপারে এ সব বিতর্ক করাই যাবে না। আমি গ্রেফতার পর্যন্ত হতে পারি।’ আমি ওঁদের পাল্টা বলেছি, ‘গ্রেফতার হলে হব।’ আমি সত্যি কথা বলতে ভয় পাই না।’’

এই বিতর্ক প্রসঙ্গে তৃণমূল বলছে, অসুরের জায়গায় মহাত্মা গান্ধীকে বসানোটা কোনও ভাবেই ঠিক হয়নি। এ প্রসঙ্গে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তখন তিনি বলেন, “এটা ঘোরতর অন্যায়। এটা পাপ কাজ হয়েছে। কোনও রকম সুস্থ রুচির সঙ্গে গোটা বিষয়টি যায় না। রাতে শুনেছি ওরা নাকি অসুর বদল করেছে। যদি করে থাকে খুবই ভাল, না হলে কড়া পদক্ষেপের মুখে পড়বে।”

কুণাল আরও বলেন, “ওরা তো বিজেপিরই অন্তরাত্মা। বিজেপি তো গডসের পূজারি।” আনন্দবাজার অনলাইন কুণালকে প্রশ্ন করে, বিজেপি তো গ্রেফতারি দাবি করছে? তখন তিনি বলেন, “বিজেপি আবার কী গ্রেফতারি দাবি করবে? ওরা তো গডসের পুজো করে। বিজেপির তো এটাই মুখ। আর গ্রেফতারির দাবিটা হল মুখোশ। ওরা হচ্ছে আদি বিজেপি। শুভেন্দুরা দলবদলু বিজেপি বলে ওদের সহ্য করতে পারছে না। এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে বিজেপির আদর্শের জায়গাটা তো নষ্ট হচ্ছে না।”

এর পরই কুণালের মন্তব্য, “শুনেছি ওরা কালই অসুর বদলে দিয়েছে। যদি না বদলে থাকে, তা হলে এটা গর্হিত অপরাধ। ওরা তো বিজেপিই মুখ! এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে বিজেপি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement