তিন বছর আগে পার্টি কংগ্রেসে বাম ও গণতান্ত্রিক ঐক্য চেয়ে বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেছিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। তাঁর সেই প্রস্তাব খারিজ হয়েছিল। এ বার সিপিআই আনুষ্ঠানিক ভাবেই সেই পথে হাঁটতে চলেছে!
তমলুকে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সিপিআইয়ের ২৬তম রাজ্য সম্মেলনের রাজনৈতিক প্রতিবেদনে এ বার ডাক দেওয়া হয়েছে, ‘বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বিকল্প’ চাই। কংগ্রেসকে ছাড়া যে ধর্ননিরপেক্ষ বিকল্প সম্ভব নয়, তা-ও প্রায় মেনে নেওয়া হয়েছে দলিলে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতার ডাক ওই প্রতিবেদনে নেই। যা থেকে বিতর্ক বেধেছে সিপিআইয়ের অন্দরে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, পার্টি কংগ্রেস চিরকালই রাজনৈতিক লাইন নির্ণয়ের সর্বোচ্চ মঞ্চ। রাজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্য সিপিআই অন্তত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিতে পারতো।
অর্থনীতির প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক বরাবরের। সেই তফাতের কথা উল্লেখ করেই সিপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং কর্মসংস্থানহীন উন্নয়নের ব্যাটন হাতে নিয়ে কংগ্রেসের চেয়ে অনেক দ্রুত এগোচ্ছে বিজেপি। আর গত লোকসভা ভোটের পর থেকে দেশের নানা প্রান্তে কোণঠাসা হওয়ার পরে এখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। সাম্প্রতিক কালে পঞ্জাব ও গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে তারা কিছুটা ক্ষত ‘উপশম’ করতে পেরেছে। প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘কংগ্রেসের অস্তিত্ব সর্বত্র রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে তাদের মধ্যে কার্যকরী সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে’।
তবে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর ডাক সিপিআইয়ের প্রতিবেদনে নেই। বামেদের অতীতের বিকল্পের ভাবনা যে ফলপ্রসূ হয়নি, পরিষ্কার কবুল করা হয়েছে সেই সত্য। সেই সঙ্গেই বলা হয়েছে, ‘বিকল্প গড়ে তোলার বিষয়ে পার্টি কংগ্রেস অর্থবহ আলোচনা করবে’। দলের একাংশ এই প্রতিবেদন থেকেই পরস্পর-বিরোধিতার অভিযোগ তুলছে। কারণ ওই একই রিপোর্টে দলের ‘দায়িত্ব ও কর্তব্য’ অংশে বলা হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে সাম্প্রদায়িক শক্তির হানা রুখে দিতে হবে। দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ কী! সাম্প্রদায়িকতা যখন প্রধান বিপদ বলছি, বাকিটাই বা বলব না কেন?’’
সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা সম্মেলনে ইতিমধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির নির্বাচনী ঐক্য চেয়ে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তমলুকে রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে এ দিন গুরুদাস, প্রবোধ পণ্ডারাও বিজেপি-র বিপদ ঠেকাতে গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা বলেছেন।