—ফাইল চিত্র।
‘‘হ্যালো স্যর, আমি গ্যাসের সাবসিডি ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি। ভর্তুকি বাবদ আপনার ছ’হাজার টাকা আমাদের কাছে আছে।’’
দিন কয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা শুভজিৎ মিশ্রকে ফোন করে ঠিক এই কথাটাই বলা হয়েছিল। শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন শুভজিৎ। কিন্তু ফোনের ও পারের ব্যক্তি নিজেকে সরকারিকর্মী বলে পরিচয় দেওয়ায় মুহূর্তেই সমস্ত সন্দেহ কেটে গিয়েছিল তাঁর। মাত্র ছ’হাজার টাকার লোভের বশে উল্টো দিকের ব্যক্তির কথা মতো নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, এমনকি মোবাইলে আসা ওটিপি-ও দিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর দফায় দফায় শুভজিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৩৩ লক্ষ টাকা! ইতিমধ্যেই তার তদন্ত শুরু করেছে তমলুকের সাইবার ক্রাইম থানা। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, একই জেলার মহিষাদলের বাসিন্দা সঞ্জীব চক্রবর্তীও এমন ফোন পেয়েছিলেন। তবে গ্যাসের ভর্তুকি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজে ওয়াকিবহাল হওয়ায় প্রতারকদের ফাঁদে পা দেননি সঞ্জীব। কিন্তু নতুন এই প্রতারণা চক্রের ঠেলায় নাজেহাল অবস্থা গ্যাস সংস্থার কর্মী এবং ডেলিভারি বয়দের!
নানা গ্যাস সংস্থা সূত্রেই খবর, বিভিন্ন গ্রাহকের বাড়িতেই ওই ধরনের ভুয়ো কল আসছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকেরা থানায় না গিয়ে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন গ্যাস সংস্থার অফিসে। কেউ কেউ আবার হাতের কাছে ডেলিভারি বয়দের পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। একটি গ্যাস সংস্থার এক কর্মীর দাবি, রীতি মতো আটঘাট বেঁধে নেমেছে ওই প্রতারণা চক্র। গ্রাহকদের নাম, ঠিকানা, এমনকি তাঁর ডিস্ট্রিবিউটরের নামও হুবহু মিলিয়ে দিচ্ছে তারা। নিশানা করা হচ্ছে মূলত সাধারণ নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের। ফোন করে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কথা বলছেন প্রতারকেরা। জানাচ্ছেন, ভর্তুকি বাবদ তাঁর হকের টাকা তাঁদের কাছে জমা রয়েছে। টাকার অঙ্ক কখনও চার হাজার, কখনও ছ’হাজার বা তার বেশি বলা হচ্ছে। গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, ওই টাকা পেতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে হবে তাঁদের। ফোনে ওটিপি গেলে দিতে হবে সেটাও। তা হলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে। ওই কয়েক হাজার টাকার চক্করে গ্রাহকেরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন!
মহিষাদলের গ়ড়কমলপুরের সঞ্জীব জানান, মঙ্গলবার তিনিও এ রকম একটি ফোন পান। ফোনের ওপারের ব্যক্তি তাঁকে জানিয়েছিলেন, ভর্তুকি বাবদ তাঁর ২০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। সঞ্জীব অবশ্য সেই ফাঁদে পা দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে বলল, ‘আপনার প্রায় ২০ হাজার টাকা জমা হয়ে আছে। কিন্তু এই টাকাটা আমরা পাঠাতে পারছি না। আপনার কাছাকাছি কোনও সাইবার ক্যাফে থাকলে সেখানে আধার কার্ড আর ব্যাঙ্কের পাশবই নিয়ে যাবেন। সেখানে গিয়ে আমাদের সঙ্গে ফোনে ওই ক্যাফের কথা বলিয়ে দিন। এর পর আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি গেলে সেটা আমাদের দিন। ব্যস, আপনার অ্যাকাউন্টে সাবসিডির টাকা ঢুকে যাবে।’ আমি নিজে গ্যাস অফিসের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তাই ওদের নাম ঠিকানা জানতে চাইতেই আমাকে রীতিমতো গালাগালি দিয়ে ফোন কেটে দিল। পরে সেই নম্বরে আর ফোন যাচ্ছে না।’’
এ ব্যাপারে গ্যাস সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই সমস্যার সুরাহা তাদের কাছে নেই। তবে গ্রাহকদের সতর্ক থানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, টাকা খোয়া গেলে সাইবার ক্রাইম থানায় জানাতে হবে।