টোল না-পেয়ে উড়ালপুল ছাড়ছে নির্মাতা

উড়ালপুলের দায় ছেড়ে দিতে চেয়ে কেএমডিএ-র কাছে প্রস্তাব পাঠায় বেসরকারি সংস্থা।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:১০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বিবাদ শুরু হয়েছিল উদ্বোধনের দিন থেকেই। শেষ পর্যন্ত কলকাতার প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত ‘সম্প্রীতি’ উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের দায় ঝেড়ে ফেলে প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছে নির্মাতা সংস্থা। কারণ, নির্মাণের শর্ত অনুযায়ী উড়ালপুলে টোল বসাতে দেয়নি পুর দফতর। ফলে নির্মাতারাও রক্ষণাবেক্ষণ করতে অপারগ। এটা তারা ইতিমধ্যেই সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর।

Advertisement

পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আলোচনায় বিবাদ মেটানোর চেষ্টা চলছিল। চুক্তি ভেঙে একতরফা সিদ্ধান্তে বেরিয়ে যাওয়া যায় না। সে-ক্ষেত্রে আমরা আদালতেই যা বলার বলব।’’ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার সুমিত দাবরিয়াল বলেন, ‘‘চলতি পরিস্থিতিতে রক্ষণাবেক্ষণের দায় আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। টোলের আয় থেকেই রক্ষণাবেক্ষণ হবে বলে লগ্নি করেছিলাম। আমরা সরকারের হাতেই উড়ালপুলটি তুলে দিতে চাই।’’

কেন এই বিবাদ?

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, গত ১১ জানুয়ারি লোকসভা ভোটের আগে গঙ্গাসাগর থেকে ওই উড়ালপুলের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিঞ্জিরাবাজার থেকে বাটানগর পর্যন্ত সাত কিলোমিটারের ওই উড়ালপুল শহরের দীর্ঘতম। জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনে এটি শহরের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প। খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি। তার ৩৫% দিয়েছিল কেন্দ্র। বাকিটা বেসরকারি সংস্থার দেওয়া। শর্ত ছিল, নির্মাণের পরে উড়ালপুলে টোল বসাবে বেসরকারি সংস্থা। সেই টাকাতেই উড়ালপুল নির্মাণের খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ চলবে। প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা ১০ মিনিটে অতিক্রম করার সুবিধা থাকায় প্রায় সকলে উড়ালপুলটি ব্যবহার করবেন, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু উড়ালপুল উদ্বোধনের ঠিক আগে সরকার ঠিক করে, বেসরকারি সংস্থাকে টোল তুলতে দেওয়া হবে না। তৃণমূল সূত্রের খবর, উড়ালপুলটি যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্রে পড়ছে। তিনিও নাকি টোল বসাতে চাননি। সরকারি সিদ্ধান্ত জেনে মাথায় হাত পড়ে বেসরকারি সংস্থার। তারা সরকারের কাছে জানতে চায়, টোল বসাতে না-দিলে তাদের লগ্নির টাকা উঠে আসবে কী করে? শেষ পর্যন্ত বলা হয়, কোনও ছোট গাড়ি থেকে টোল নেওয়া যাবে না। কৃষিপণ্যবাহী বড় গাড়িতেও টোল বসানো চলবে না। বেসরকারি সংস্থার আশা ছিল, লোকসভা ভোটের পরে সরকার টোল বসাতে সাহায্য করবে। কিন্তু কেএমডিএ জানিয়ে দেয়, ছোট গাড়িতে কোনও ধরনের টোল বসবে না। গাড়ির সংখ্যা দেখে টোলের খরচের ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি হচ্ছিল না কেএমডিএ।

তার পরেই উড়ালপুলের দায় ছেড়ে দিতে চেয়ে কেএমডিএ-র কাছে প্রস্তাব পাঠায় বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার দাবি, তাদের লগ্নির খরচ এবং অন্যান্য দায় মিটিয়ে দিয়ে সরকার উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিজেদের হাতে নিয়ে নিক।

পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, চুক্তি এ ভাবে ভাঙা যায় না। উড়ালপুলের নীচের রাস্তাটি বেসরকারি সংস্থার তৈরি করার কথা ছিল। তা হয়নি। সরকার টোল বসানোর চুক্তি ভাঙল কেন? পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘আদালতেই তার বিচার হবে।’’ কেএমডিএ-র কর্তারা জানাচ্ছেন, টোল বসানো যায়নি রাজনৈতিক চাপেই। চালু হওয়ার পরে উড়ালপুলটি আর বন্ধ করা যাবে না। ফলে কেএমডিএ-র ঘাড়েই রক্ষণাবেক্ষণের দায়দায়িত্ব চাপবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement