মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
২০২৪-এ লোকসভা ভোটে সারা দেশে কোন প্রশ্নের জবাব চাইবে? উত্তর একটি বাক্যে— নরেন্দ্র মোদী ফিরবেন? নাকি আর নয়? বাংলার ৪২টি আসনেও সেই প্রশ্নেই ভোট হবে। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষে বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম কৌতূহলের বিষয় হল একটাই— আবার কি কংগ্রেস-তৃণমূল নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা হবে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দরজা খোলা। তবে কংগ্রেসকে তৃণমূলনেত্রী পাশাপাশিই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন, বাংলায় কংগ্রেসের মাত্র দু’টি আসন জেতা রয়েছে (বহরমপুর এবং মালদহ দক্ষিণ)। ফলে জোটের আসন নিয়ে দরদস্তুরের যেন কংগ্রেস তাদের ‘মুরোদ’ মাথায় রাখে। বুধবার বঙ্গ কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে জোট নিয়ে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কেসি বেণুগোপালদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলার কংগ্রেসনেতাদের অধিকাংশই দু’টি বিষয় জানিয়েছেন। এক, তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আগ্রহী নন (তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড)। এবং দুই, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পথে এগোলেও যেন সাতটির কম আসনে রাজি না হয় দল।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে ছাড়াই ২০২১ সালে বিজেপিকে রুখে দিতে পেরেছিলেন। এটা মাথায় রাখতে হবে।’’ কংগ্রেসের সাতটি আসনের দাবি প্রসঙ্গে কুণাল খানিকটা হাল্কাচালেই বলেন, ‘‘ছোটরা বড়দের কাছে অনেক সময়েই অনেক আব্দার করে। কিন্তু ছোটদের মাথায় রাখতে হবে, যাতে সেই আব্দারটা বাস্তবসম্মত হয়।’’ অর্থাৎ, কংগ্রেসের যে দাবি আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, তা ‘বাস্তবসম্মত’ নয়। প্রথমে মমতা এবং পরে কুণালের বক্তব্য থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট— দর কষাকষির আগে কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ বাড়াতে শুরু করে দিল তৃণমূল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, যে সাতটি আসনের কথা বাংলার নেতারা বলেছেন, সেগুলি হল বহরুমপুর, মালদহ দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, মালদহ উত্তর, রায়গঞ্জ এবং দার্জিলিং। বাংলার নেতারা রাহুলদের সামনে দাবি করেছেন, ওই সাতটি আসনে তাঁদের জেতার ক্ষমতা রয়েছে।
কিন্তু ওই সাতটি আসনে কী ছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ছবি? কী-ই বা হয়েছিল ২০২১ সালের বিধানসভায়?
বহরমপুর
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অধীর চৌধুরী বহরমপুরে পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ১০৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অধুনা তৃণমূলের এবং একদা তাঁর আস্থাভাজন অপূর্ব সরকার (ডেভিড)। তিনি পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪১০টি ভোট। ২০১৪ সালে অধীরের ৩ লক্ষের ব্যবধান নেমে এসেছিল ৮০ হাজারের কাছাকাছি। গত লোকসভায় সার্বিক ভাবে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট ছিল না। কিন্তু অধীরের আসনে প্রার্থী দেয়নি বামফ্রন্ট। তার দু’বছর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বহরমপুর লোকসভার সাতটি বিধানসভার একটিও কংগ্রেস পায়নি। তার উপর বহরমপুর বিধানসভা আসনটি জেতে বিজেপি! দ্বিতীয় হয় তৃণমূল। বাকি ছ’টি বিধানসভাই জেতে তৃণমূল। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হল, ছ’টি বিধানসভাতেই কংগ্রেস ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে পূর্ণ আসন সমঝোতা হয়েছিল। ফলে ২০২১-এর নিরিখে বহরমপুর অধীরের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে লোকসভা ভোটে অধীর নিজেই ‘ফ্যাক্টর’। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে অধীরের জয় মসৃণ হবে।
জঙ্গিপুর
২০১৯ সালের চতুর্মুখী লড়াইয়ে প্রথম বারের জন্য জঙ্গিপুর জিতেছিল তৃণমূল। সাংসদ হন খলিলুর রহমান। কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ছিলেন তৃতীয় স্থানে। উত্থান হয় বিজেপির। একদা সিপিএম নেত্রী মাফুজা খাতুনকে প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির। তিনি প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার ভোট পান। চতুর্থ হয় সিপিএম। হিসেব বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের ভোট কমেছিল ১৪.১৯ শতাংশ। উল্টোদিকে বিজেপির ভোট বেড়েছিল ১৫.৬৫ শতাংশ। সিপিএমের ভোট এক ধাক্কায় কমে যায় ২৫.৭৫ শতাংশ। তৃণমূলও ২৪.৬১ শতাংশ ভোট বাড়াতে পেরেছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট গড়েছিল। তাতে দেখা যায় মাত্র লালগোলা বিধানসভায় কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। বাকি ছ’টির মধ্যে পাঁচটিতে বাম-কংগ্রেস ছিল তৃতীয় স্থানে। রঘুনাথগঞ্জে কংগ্রেস ছিল চতুর্থ স্থানে। সাতটি বিধানসভা আসনেই জেতে তৃণমূল। তবে মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুর পর সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে হেরে যায় তৃণমূল। যদিও বাইরন তিন মাসের মধ্যেই তৃণমূলে চলে যান। ফলে জঙ্গিপুরের সাতটি বিধানসভাই শাসক তৃণমূলের দখলে। এই জঙ্গিপুরে একদা জিতেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সম্ভবত সেই সূত্রেই জঙ্গিপুর চাইবে কংগ্রেস। আর তৃণমূল পাল্টা বলবে অঙ্কের হিসেব।
মুর্শিদাবাদ
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রথমবার মুর্শিদাবাদ আসন জেতে তৃণমূল। সাংসদ হন আবু তাহের খান। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬ লক্ষ ৪ হাজার ৩৪৬। দ্বিতীয় কংগ্রেসের আবু হেনা। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯২৯। বিদায়ী সাংসদ তথা সিপিএম প্রার্থী বদরোদ্দুজা খান চতুর্থ হন। শতাংশের অঙ্কে গত লোকসভায় মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ভোট বৃদ্ধির হার ছিল ১৯.৫৬ শতাংশ। কংগ্রেসের ভোট কমেছিল ৫.৭২ শতাংশ। বামেদের ভোট কমেছিল ২১.৩৩ শতাংশ। বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর ছিলেন ২০১৯ সালে মুর্শিদাবাদ লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী। গেরুয়া শিবিরের ভোট বেড়েছিল ৯.১৫ শতাংশ। কিন্তু দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ বিধানসভায় জেতে বিজেপি। বাকি ছ’টিতে জেতে তৃণমূল। তবে ভগবানগোলা, রানিনগর, হরিহরপাড়া, ডোমকল এবং জলঙ্গি বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে।
রায়গঞ্জ
একদা কংগ্রেসের ‘গড়’ বলে পরিচিত এই আসনটি ২০১৪ সালে কংগ্রেস হারায়। দীপা দাশমুন্সি পরাস্ত হন সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের কাছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে চতুর্মুখী লড়াই হয় রায়গঞ্জে। জেতেন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে তৃণমূল। সিপিএমের সেলিম এবং কংগ্রেসের দীপা চলে যান যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির যেমন ২১.৭৬ শতাংশ ভোট বেড়েছিল, তেমনই তৃণমূলও অধরা আসনে ভোট বাড়াতে পেরেছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ লোকসভার অন্তর্গত সাতটির মধ্যে পাঁচটিতে জয় পেয়েছে তৃণমূল। রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ বিজেপি জিতলেও দু’জন বিধায়কই পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সাতটি আসনেই বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা ছিলেন তৃতীয় স্থানে। তবে রায়গঞ্জে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হলে সংখ্যালঘু ভোট এক জায়গায় এলে তা বিজেপির পক্ষে ভাল হবে না। বিজেপির জেতা এই আসনটি আগে কখনও তৃণমূল জেতেনি। তাই মমতার বিবেচনায় এই আসনটি থাকলেও থাকতে পারে।
দার্জিলিং
মাস দেড়েক আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর পাহাড়ের গোর্খা নেতা বিনয় তামাংকে কংগ্রেসে নিয়ে এসেছেন। কংগ্রেস কি দার্জিলিং নিয়ে ‘আত্মবিশ্বাসী’? পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের ভোটের সমীকরণ মেলে না। ২০০৯ সাল থেকে পর পর তিন বার দার্জিলিং লোকসভা জিতেছে বিজেপি। দল এক হলেও প্রতিবারই নতুন নতুন সাংসদ জিতেছেন। দার্জিলিঙে গত লোকসভায় বিজেপির ভোট ছিল ৫৯ শতাংশেরও বেশি। ২৫.৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দার্জিলিং লোকসভার সাতটি কেন্দ্রে সিপিএম-কংগ্রেসকে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি! মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠীর প্রার্থী জিতেছিলেন কালিম্পঙে। সমতলের চোপড়া আসনটি জিতেছিল তৃণমূল। বাকি পাহাড় ও সমতলের সব আসনই বিজেপি জেতে। তবে তার পরে পাহাড়ে পুরভোটে খাতা খুলেছে তৃণমূল। অনীত থাপাদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্য সরকার প্রশাসনিক কাজেও ‘তৎপরতা’ বাড়িয়েছে। এই আসনটি কি মমতা কংগ্রেসকে ছেড়ে দেবেন?
মালদহ উত্তর
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মালদহ উত্তর জিতেছিল বিজেপি। সিপিএম থেকে গেরুয়া শিবিরে যাওয়া খগেন মুর্মু সাংসদ হন। এই কেন্দ্রেও গত লোকসভায় লড়াই হয়েছিল চতুর্মুখী। খগেন পেয়েছিলেন ৩৭.৬১ শতাংশ ভোট। তৃণমূলের মৌসম নূর (এখন রাজ্যসভার সাংসদ) পেয়েছিলেন ৩১.৩৯ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী পেয়েছিলেন ২২.৫৩ শতাংশ ভোট। বিজেপি ও তৃণমূল— দু’টি দলের ভোট বেড়েছিল যথাক্রমে ২২.৫২ শতাংশ এবং ১৪.৪২ শতাংশ হারে। কংগ্রেসের ভোট কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। সিপিএমের ভোটও কমে গিয়েছিল ২৪.০৫ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মালদহ উত্তরের অন্তর্গত হবিবপুর, গাজোল এবং মালদহ জেতে বিজেপি। বাকি চারটি আসন চাঁচল, হরিশচন্দ্রপুর, মালতীপুর, রতুয়ায় জেতে তৃণমূল। বিজেপির জেতা তিনটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল। আর তৃণমূলের জেতা চারটি আসনে দু’নম্বরে ছিল বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের কার্যত উপস্থিতিই ছিল না।
মালদহ দক্ষিণ
মালদহ দক্ষিণ লোকসভায় ২০১৯ সালে জিতেছিলেন কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। তৃণমূল ছিল তৃতীয় শক্তি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। অধীরের বহরমপুরের মতোই এই লোকসভা কেন্দ্রেও বামেরা প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল দেখলে দেখা যাচ্ছে, সাতটি বিধানসভার মধ্যে কেবল ইংরেজবাজারে জয় পেয়েছিল বিজেপি। বাকি ছ’টিতেই ফুটেছিল জোড়াফুল। তাৎপর্যপূর্ণ হল, মালদহ দক্ষিণের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ২০২১ সালে দু’টিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। সুজাপুর এবং সামশেরগঞ্জ (মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত)।
তৃণমূলের সঙ্গে দরদস্তুরের টেবিলে বসে কংগ্রেস যে সাতটি আসন চাইবে বলে প্রাথমিক ভাবে ভাবছে, তার একটিও তৃণমূলের জেতা আসন নয়। দু’টি কংগ্রেসের জেতা। বাকি পাঁচটি বিজেপির। আসন সমঝোতার আলোচনায় যার-যার জেতা আসন পরস্পরকে ছেড়ে দেবে, এটাই প্রাথমিক শর্ত। গত লোকসভায় তৃণমূল জিতেছিল ২২টি আসনে। কংগ্রেস দু’টিতে। বাকি ১৮টিতে বিজেপি। অর্থআৎ। দর কষাকষির টেবিলে থাকবে ২০টি আসন। তবে গত সাড়ে চার বছরে আসানসোল আসনটি তৃণমূল উপনির্বাচনে জিতেছে। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে বিজেপি ১৬টি নেমেছে। তৃণমূলের আসন এখন খাতায়কলমেই ২৩টি। সেই অঙ্কে বিজেপির আসন ১৭টি। আবার বিজেপির অর্জুনের মতোই তৃণমূলের দুই সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী ‘বিজেপি-পন্থী’। সব মিলিয়ে বিজেপির আসন সেই ১৮টিতেই দাঁড়াচ্ছে। শিশির-বিদ্যেন্দুকে বাদ দিলে তৃণমূলের সেই ২২টিই। হরেদরে কংগ্রেস-তৃণমূলকে সেই ২০টি আসন নিয়েই আসন সমঝোতার আলোচনায় যেতে হবে। তার মধ্যে এক-চতুর্থাংশ (পাঁচটি) নতুন আসন কি কংগ্রেসকে ছাড়বেন মমতা? প্রশ্ন সেটাই। এবং লাখটাকার প্রশ্ন।