স্বাস্থ্য ভবনের কাছে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। বিধাননগরে। —ফাইল চিত্র।
স্যালাইন-কাণ্ডের জেরে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়ল। আর জি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে এই ক্ষেত্রেও চক্রান্তের ইঙ্গিত করে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরকে নিশানা করে এফআইআর দায়ের করার দাবি জানিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পথে নেমেছিল কংগ্রেস, সিপিএম-ও।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের উদ্দেশে বলেছেন, মনে হচ্ছে যেন তিনি এবং স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্যালাইন-কাণ্ডের ‘দায়’ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপরে চাপাতে চাইছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের বলির পাঁঠা করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে শুভেন্দুর অভিযোগ। এই সূত্রেই তাঁর আরও দাবি, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত। ড্রাগ কন্ট্রোলারের রিপোর্টে দেখে প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হওয়া দরকার।”
যদিও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। মেদিনীপুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়েও চক্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করেছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “একটি বিভাগের একটি ইউনিটেরই ক্ষতি হল কী ভাবে, নজর ঘোরাতেই কি স্যালাইনের বিষয়টি আনা হল? সরকার-বিরোধী প্রচারে থাকা হাসপাতালের কোনও পদাধিকারী জড়িত কি না, তা দেখতে হবে! একটা (আর জি কর) কুৎসায় লাভ হল না, তাই নতুন চক্রান্ত কি না, সেটাও দেখা দরকার।”
স্যালাইন-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগে দিনভর তেতে ছিল রাজপথও। কংগ্রেসের স্বাস্থ্য ভবন অভিযানকে ঘিরে বিধাননগরে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের বচসা বেধেছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করুন মুখ্যমন্ত্রী, এই দাবিতে প্রতীকী স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, দলের নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, মায়া ঘোষ, কৃষ্ণা দেবনাথ, সুমন পাল, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রতা (রাসু) দত্ত, তাপস মজুমদার, সুমন রায় চৌধুরী, প্রদীপ প্রসাদ, মিতা চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যেরা। শুভঙ্করের বক্তব্য, “জাল ওষুধ কত দূর ছড়িয়ে পড়েছে, কেউ জানে না। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও সেটা পৌঁছে গেলে তিনিও তো আক্রান্ত হবেন। দুর্নীতির জন্য সরকার বুঝতে চাইছে না, সঙ্কট কতটা গভীর।” পরে স্যালাইন-কাণ্ডে অসুস্থদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন শুভঙ্কর।
কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করেছেন সিপিএমের ছাত্র-যুবরা। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সরাসরি বলেছেন, “দুর্নীতির সাম্রাজ্য চলছে। তা টিকিয়ে রাখতে হুমকি-প্রথা চালানো হচ্ছে। আরজি কর-কাণ্ডের সময়েও বলেছিলাম, দুর্নীতি-চক্র এই অপরাধ করেছে।” সেই সঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁত, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই মাফিয়া-রাজ’ চলার মতো অভিযোগও তুলেছেন সেলিম।