সোমেন মিত্র ও সূর্যকান্ত মিশ্র।
নিজেদের জন্য ১০০ এবং জোট-সঙ্গীদের জন্য বাকি ১৯৪। এই রকম একটা প্রাথমিক সূত্র সামনে রেখেই বামেদের সঙ্গে আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য আসন-রফার আলোচনা শুরু করতে চায় কংগ্রেস।
দলের নানা স্তরের নেতাদের বিধানসভায় প্রার্থী করার ভাবনা ভাবতে হবে কংগ্রেসকে। সেই হিসেব কষেই আসনের সংখ্যা নির্ধারণ হবে। আর বামফ্রন্ট শরিকদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মাথাব্যথা। তার জন্য দফায় দফায় আলোচনা করতে হবে সিপিএমকে। এই সব সমীকরণ মাথায় রেখেই আসন-ভাগের প্রক্রিয়ায় এগোতে চাইছে জোট শিবির।
গত বিধানসভা ভোটে বাম ও কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে লড়লেও তা নিয়ে তিক্ততা হয়েছিল বিস্তর। বেশ কিছু আসনে কংগ্রেসের পাশাপাশি বামফ্রন্টের কোনও না কোনও শরিক দলের প্রার্থী ছিল। আর গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের জোট প্রক্রিয়া ভেস্তেই গিয়েছিল আসন নিয়ে টানাটানির জেরে। ওই দুই নির্বাচনেই বাম-কংগ্রেস তাদের আশানুরূপ ফল পায়নি। কিন্তু এ বার অন্তত আসন-ভাগের প্রক্রিয়া জটিলতামুক্ত করতে চাইছেন সোমেন মিত্র, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা।
কয়েক মাস আগে কলকাতা পুরসভার জন্য আসন ভাগের আলোচনা শুরু হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। করোনার জন্য পুরভোট স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই আলোচনা আর এগোয়নি। আগামী বছরের বিধানসভা ভোট মাথায় রেখে ঘর গুছোতে আগে উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেসই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুই প্রথম ফোন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। সিপিএমের অন্দরেও সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মত, হাতে সময় থাকতে আসন ও সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই সেরে নিয়ে ময়দানে নেমে গেলে তাঁদের এই ‘দুর্দিনে’র বাজারেও কিছু সুফল পাওয়া সম্ভব। আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক আলোচনায় বসবেন প্রদেশ কংগ্রেস ও রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্ব।
প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা ১০০ আসনে লড়লাম আর বাকি ১৯৪ আসন থাকল বামেদের জন্য, এমন একটা সূত্র নিয়ে এগোনো যেতে পারে। তবে কে কোথায় কোন আসনে লড়বে, সেটা ঠিক করাই আসল। দু’পক্ষের কাছাকাছি আসন থাকাই জোটের জন্য আদর্শ।’’ আবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘পুরনো ভোটের ফল এবং সাংগঠনিক অবস্থা দেখলে কংগ্রেসের শক্তি বেশি মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায়। সেখানে এলাকা ধরে ধরে দু’পক্ষেরই আসন রাখার সূত্র কঠিন হতে পারে।’’ গত বছর লোকসভা ভোটেও কংগ্রেস মুর্শিদাবাদ বা উত্তর দিনাজপুর জেলায় সিপিএমকে আসন ছাড়তে চায়নি। এ বার সে ক্ষেত্রে নিজেদের ‘ঘাঁটি’তে তুলনায় বেশি আসন নিয়ে অন্যত্র কম আসন নিতে হবে কংগ্রেসকে।
বিধানসভায় গত বার যে আসনে যে জিতেছিল, তার জন্য সেই আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রথম সূত্র জোটে থাকবেই। বাম সূত্রের খবর, বামফ্রন্ট শরিকদের বাইরে এনসিপি, পিডিএস, আরজেডি, সিপিআই (লিবারেশন)-এর মতো কিছু দলের জন্য কিছু আসন রাখার চেষ্টাও হবে।