বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে রাস্তায় সিনেমা দেখাতে গিয়ে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে হেনস্থার অভিযোগ সামনে রেখে তাঁর পাশে দাঁড়াল বিরোধী দুই দল কংগ্রেস ও সিপিএম। রাসবিহারী এলাকায় ‘সন্ত্রাস’ বন্ধ করার দাবিতে টালিগঞ্জ থানার সামনে বুধবার অবস্থান-বিক্ষোভেও বসেছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনার পর থেকেই নীরব। ঘটনাস্থল থেকেই মঙ্গলবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন শোভনদেববাবু। তখন ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরে দলের নেতৃত্বের তরফে কেউই আর বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কেউ প্রকাশ্যে মুখও খোলেননি। শোভনদেববাবু দিনভর বাড়িতেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রাতের ওই ঘটনার পরে শরীর খারাপ হয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিশ্রাম নিতে বলেছেন। দলের কারও সঙ্গে আর কথা হয়নি।’’
সিনেমা দেখানোর জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাসবিহারী গুরুদ্বার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার আলো নিভিয়ে রাখতে কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক শোভনদেববাবু। কিন্তু আলো নেভানো হলেই দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের সমর্থকেরা এসে বারবার আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে গোলমালের জেরেই তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। আবার সাংসদের পাল্টা অভিযোগ, তাঁর সমর্থক মহিলাদের মন্ত্রীই হেনস্থা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘শোভনদেব তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক, দলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আছেন। তাঁর মতো প্রবীণ নেতাকে দুষ্কৃতীরা হেনস্থা করেছে, এটা লজ্জার বিষয়। হেনস্থাকারীরা আবার শাসক দলেরই ছত্রচ্ছায়ায় আছে! তৃণমূল নেতৃত্বের উচিত, অবিলম্বে হেনস্থাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রশাসনেরও উচিত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা।’’ শোভনদেববাবুর বাড়িতে এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখাও করতে গিয়েছিলেন মান্নান।
একই সুরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘সরকারি কর্মসূচি করতে গিয়ে এক জন বর্ষীয়ান মন্ত্রীকে এমন ঘটনার মুখে পড়তে হবে? লজ্জাজনক ঘটনা! বারেবারেই দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলে যে যত পুরনো নেতা, তাঁর তত বেশি সঙ্কট!’’ শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর সংঘাতের পরে মঙ্গলবার রাতে রাসবিহারী ও টালিগঞ্জে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন দু’পক্ষের সমর্থকেরা। যুব নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের এক দল কর্মী এ দিন টালিগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান করে দাবি করেন, রাসবিহারী এলাকাকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ করার দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হবে। তাঁদের প্রশ্ন, মন্ত্রী-সাংসদের বিবাদের জেরে এলাকার মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে কেন?