সপ্তমীর সন্ধ্যায় বাম-কংগ্রেসের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র.
বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্যে যৌথ কর্মসূচি তৈরি করে আন্দোলনের মাত্রা বাড়াতে চায় বাম ও কংগ্রেস। আন্দোলন ও কর্মসূচির জেরে তৈরি হওয়া জমির উপরে দাঁড়িয়েই হবে আসন ভাগাভাগি। সপ্তমীর সন্ধ্যায় মুখোমুখি বসে এই কৌশলই ঠিক করলেন প্রদেশ কংগ্রেস ও রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্ব।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাঁর উপস্থিতিতে শুক্রবারই প্রথম বাম নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈঠক হল। বহরমপুর থেকে কলকাতায় এসে এ দিন সন্ধ্যায় আরএসপি-র ক্রান্তি প্রেসে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন অধীরবাবু। মুর্শিদাবাদ জেলায় আরএসপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক একেবারেই ‘মধুর’ নয় এবং গত বছর লোকসভা ভোটে বহরমপুরে সিপিএম প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা করার পরেও আরএসপি অধীরবাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে আরএসপি-র একটি দফতরে বৈঠক করে অধীরবাবুরা জোট-বার্তাকেই জোরালো করতে চেয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের মত। কংগ্রেসের তরফে বৈঠকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও বিধায়ক নেপাল মাহাতো। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের পাশাপাশি ছিলেন সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি এবং আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য ও অশোক ঘোষ।
বৈঠকের পরে অধীরবাবু বলেন, ‘‘খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। যৌথ আন্দোলন তো চলবেই, যৌথ কর্মসূচি নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। দু’পক্ষই খসড়া কর্মসূচি তৈরি করব।’’ আসন ভাগের আনুষ্ঠানিক আলোচনা আরও পরে শুরু হবে বলে প্রদেশ সভাপতি জানিয়েছেন। সূর্যবাবুরও বক্তব্য, ‘‘যৌথ আন্দোলন ও কর্মসূচি আরও তীব্র করতে হবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের বাইরে মানুষকে বিকল্প দেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা কর্মসূচি নেব।’’ মোদী সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ২৬ নভেম্বর শ্রমিক সংগঠনগুলি যে সর্বভারতীয় ধর্মঘট ডেকেছে, বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেস তাকে সমর্থন করবে বলে এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে।
বাম নেতৃত্ব চেয়েছিলেন, যা পূর্বনির্ধারিত আছে, তার বাইরে আরও কিছু যৌথ কর্মসূচি এ দিনই ঠিক করে নেওয়া হোক। কিন্তু এআইসিসি-র দেওয়া কিছু দলীয় কর্মসূচি সামনে আছে বলে কংগ্রেস একটু সময় চেয়েছে। ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে অধীরবাবু ও বিমানবাবু যৌথ কর্মসূচির ব্যাপারে ফোনে কথা বলে সংশ্লিষ্ট দলে জানিয়ে দেবেন। তবে সূত্রের খবর, আসন-রফার সংখ্যা নিয়ে আলোচনা না হলেও কথা প্রসঙ্গে বিমানবাবু বৈঠকে বলেছেন, তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে তাঁরা ‘আন্তরিক’ বলেই লোকসভায় জোট না থাকলেও অধীরবাবু ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেননি। এমনকি, বহরমপুরে আরএসপি প্রার্থী দিয়ে দিলেও তিনি গিয়ে সাধারণ সভা করে সিপিএমকে বলে এসেছিলেন কংগ্রেসকেই সমর্থন করতে। কংগ্রেস নেতাদেরও আশা, এ বার আসন-রফা আগের চেয়ে সুষ্ঠু ভাবে হবে।