আব্দুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি অনাস্থায় বিধানসভার অন্দরে বিজেপি-র সঙ্গে ভোট দিতে আপত্তি নেই বাম-কংগ্রেসের। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যত এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। যদিও দুই নেতাই বিজেপি-র সঙ্গে তাঁদের ‘রাজনৈতিক অবস্থান’কে এক করে দেখতে নারাজ।
বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে দুই বিরোধীনেতা দাবি করেন, যে ভাবে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী এবং বিধায়করা দল ছাড়তে শুরু করেছেন, মন্ত্রীরা বেসুরো কথা বলছেন, তাতে জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দুই নেতার মন্তব্য, ‘‘এই একের পর এক দলবদলে আমরাও বিভ্রান্ত। তাই সরকারের উচিত নিজেদেরই বিধানসভার অধিবেশন ডেকে আস্থাভোটের সম্মুখীন হওয়া।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভায় আস্থাভোট হলে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান। মমতা-সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বিজেপি-ও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি বিজেপি-র সঙ্গে একযোগে বিধানসভায় মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বামপন্থী দলগুলো এবং কংগ্রেস ?
প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, ‘‘আমরা বেশ কিছু ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবের পক্ষ নিয়েছিলাম। তাতে তো আমরা আর তৃণমূল হয়ে যাইনি! তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল, আছে এবং থাকবে। তাই আস্থাভোটের ক্ষেত্রে বিজেপি কী করবে, তাতে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই।’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘সরকারের উপর বিধায়কদের আস্থা আছে কিনা, তা সরকার বিধানসভার অন্দরে যাচাই করুক। বিধানসভা ডাকা উচিত রাজ্যের স্বার্থে। সরকার কি বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে ভয় পাচ্ছে ? এই সরকারের প্রতি আমাদের কোনও আস্থা নেই। তাই আস্থা প্রস্তাবে আমরা সরকারের বিপক্ষে ভোট দেব। বাকিরা কে কোথায় ভোট দেবে তা পরের কথা।’’
আরও পড়ুন: অপসারণকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে কনিষ্ঠ অধিকারী
আরও পড়ুন: পাণ্ডবেশ্বরে সভা তৃণমূলের, ডাক নেই বিধায়ক জিতেন্দ্রকে, আবার ছড়াচ্ছে জল্পনা
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার এই মেয়াদকালেই তৃণমূল সরকারের আনা এনআরসি বিরোধী প্রস্তাব সমর্থন করেছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া পূরণে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধেও রাজ্য সরকারের আনা প্রস্তাবের পক্ষেই ছিলেন মান্নান-সুজনের নেতৃত্বাধীন বিধায়করা। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন বিজেপি বিধায়করা। কিন্তু বিধানসভায় সরকার আস্থা প্রস্তাব আনলে বাম-কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে একই অবস্থান নেবেন বিজেপি-র বিধায়করা। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপি পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা বলেছেন, ‘‘এই রাজ্য সরকার ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে। আগামী নির্বাচনেই তারা বিদায় নেবে। যদি বিধানসভায় আস্থাভোট হয়, তবে আমরা অবশ্যই দলের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের বিপক্ষে ভোট দেব।’’