একে তো ঘটনা বাসি হয়ে যাওয়ার দু’সপ্তাহ পরে বন্ধের ডাক! সেই কর্মসূচি নিয়েই দলের অন্দরে বিতর্কের জেরে বাংলা বন্ধের দিন বদল করল প্রদেশ কংগ্রেস। রাজীব গাঁধীর জন্মদিন বলে ২০ অগস্ট বন্ধের সূচি পরিবর্তন করে ১৮ অগস্ট ধর্মঘট করার কথা সোমবার ঘোষণা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বন্ধ-বিভ্রান্তিতে অধীর যখন দলের মধ্যে বির্তকের মুখে, সেই সময়েই বন্ধের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে গিয়ে নতুন বিতর্ক ডেকে আনলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
তারিখ পরিবর্তন করে কংগ্রেস যে দিন (১৮ অগস্ট) বন্ধ ডেকেছে, সেই দিনই তৃণমূলের কর্মিসভা রয়েছে নজরুল মঞ্চে। সেই সভায় যাওয়ার পথে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা কেউ বাধা পেলে কংগ্রেসের হাড় ভেঙে দেওয়া হবে বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন সুব্রতবাবু! তাঁর কথায়, ‘‘ওই দিন নজরুল মঞ্চে আমাদের দলের সভা আরও বড় করে হবে। সেখানে আসার পথে কর্মীদের কেউ বাধা দিলে হাড় ভেঙে দেব!’’ কংগ্রেসের বন্ধের ডাককে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি পঞ্চায়েতমন্ত্রী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর এবং সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই বন্ধের দিন বদলাতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘‘ওই পার্টি (কংগ্রেস) খায় না মাখে, তাই লোকে জানে না! প্রথমে ২০ অগস্ট বন্ধ ডেকে বিপদে পড়েছিল, তাই এ বার ১৮ তারিখ ডেকেছে।’’
সুব্রতবাবুর এই মন্তব্যকে অবশ্য গুরুত্ব দেননি অধীর। তাঁর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র রাজনৈতিক মুখপাত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বুদ্ধি-বিবেচনার জগতে এখন অমাবস্যার ঘনঘটা! কংগ্রেস তার মতো করেই চলবে। এক দিন রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়ালেও এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রীতদাস হয়ে কে কী হুমকি দিল, তাতে কংগ্রেস ভয় পায় না!’’ সুব্রতবাবুর মন্তব্যকে অধীর গুরুত্ব না দিলেও ঘটনা হল, ২০ অগস্ট তাঁর বন্ধের ডাকে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন মানসবাবুই। এবং এ বারও তিনি আপত্তি বহাল রেখেছেন!
কেতুগ্রাম থেকে সবংয়ে ছাত্র হত্যা, রাজ্য জুড়ে খুন-ধর্ষণ এবং পুলিশি অপদার্থতার প্রতিবাদে ২০ তারিখ বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন অধীর। সবংয়ের বিধায়ক মানসবাবু তখনই বলেছিলেন, ওই দিনটা রাজীব গাঁধীর জন্মদিন। ‘সদ্ভাবনা দিবসে’ কংগ্রেসের নানা কর্মসূচি থাকে। বন্ধ পিছিয়ে ২১ তারিখ করার জন্য প্রদেশ সভাপতিকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের ‘হিটলারি আচরণে’র প্রতিবাদে বন্ধ হবে ১৮ তারিখ। কিন্তু তার পরের দিনই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সম্মেলন আছে। যে সম্মেলন সফল করার জন্য ঝাঁপিয়েছেন মানসবাবু। আগের দিন বন্ধ হলে সম্মেলনে বাইরের জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকেরা আসতে সমস্যায় পড়বেন বলে মানসবাবুদের আশঙ্কা। সেই আশঙ্কা থেকেই মানসবাবু এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতির অনুমোদন নিয়েই দে়ড় মাস আগে ঠিক হয়েছে, ১৯ অগস্ট সংখ্যালঘু সম্মেলন হবে। তার আগের দিন বন্ধ হলে লোকজনের যাতায়াতে কিছু অসুবিধা তো হবেই। তাই প্রদেশ সভাপতিকে অনুরোধ করছি, বন্ধটা ১৭ বা ২১ তারিখ হলে কারও অসুবিধা থাকে না!’’
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও এ দিন বলেছেন, ‘‘কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজীব গাঁধীর জন্মদিনে বন্ধ ডাকা হয়েছিল। ওই দিনটির সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের আবেগ জড়িত। বিষয়টা দলীয় হাইকম্যান্ডের নজরেও আনা হয়েছিল।’’ দীপার দাবি, হাইকম্যান্ডের পরামর্শেই বন্ধের দিন বদলানো হয়েছে। ছাত্র-মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনায় বন্ধের ডাক দিতে গিয়েও কংগ্রেসে যা চলছে, তাতে ব্যথিত দলের একটি বড় অংশই।