শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
সেই ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার পর থেকে শেখ শাহজাহান ‘নিখোঁজ’। এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালি এলাকায় তৃণমূলকে নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্ন নিয়ে শাসক দলের অন্দরে উঁকি দিলে দু’ধরনের মতই সামনে আসছে। এক দলের দাবি, কেউ দলের ঊর্ধ্বে নন। অন্য দিকে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বরাবর শাহজাহান ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁরা কিছু বলতে ইতস্তত করছেন। দল সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে যেমন দ্বিধা বাড়ছে, বিরোধীরাও তেমনই শক্তি বাড়াচ্ছে এলাকায়। বিজেপি তাদের অনেক ‘ঘরছাড়া’ কর্মীকে ঘরে ফেরানোর দাবি করেছে। তৃণমূলের অনেকেই বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এখনই এলাকায় নেতা ঠিক করে না দেন, তা হলে লোকসভা ভোটে সমস্যা বাড়বে।
দলের একটি সূত্রের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুটা সামনে এসেছেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। বরাবর শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুকুমার। তবে ২৬ জানুয়ারি তাঁকে সরবেড়িয়ায় কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল। শাহজাহান তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে এই প্রথম কোনও মিছিলে তিনি থাকলেন না। তা হলে কি তিনিই এলাকায় দলকে নেতৃত্ব দেবেন, এই প্রশ্নের জবাবে সুকুমার বলেন, ‘‘দল আপাতত যা দায়িত্ব দিয়েছে, তাই পালন করছি। দল যদি মনে করে আমি নেতৃত্ব দেব, তা হলে সেটাই করব।’’
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, বনগাঁ-হাবড়ায় বা বীরভূমে যেমন বালু বা কেষ্টর পরিবর্তে যৌথ নেতৃত্বকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা, তেমনই সন্দেশখালিতেও কাউকে এখনই দায়িত্ব দিলে দলের পক্ষে মঙ্গল। সন্দেশখালি থানা এলাকায় তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতির কথায়, ‘‘বিক্ষুদ্ধ তৃণমূলের একটা অংশ তলে তলে যোগাযোগ রাখছে বিজেপির সঙ্গে। আর একটা অংশ জল মাপছে, যদি ‘বাঘ’ (অর্থাৎ শাহজাহান) খাঁচায় ঢোকে, তা হলে তাঁরা দলে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’’ তিনি জানান, তিনি নিজেও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন।
যদিও সন্দেশখালি ২ ব্লকে তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি লক্ষ্মণ অধিকারী সাফ বলেন, ‘‘কেউ দলের ঊর্ধ্বে নন। শেখ শাহজাহান তো তৃণমূল সরকার হওয়ার পরে দলে এসেছেন। আমরা তো দল যখন ক্ষমতায় ছিল না, তখন অনেক কঠিন সময় থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছি।’’ শাহজাহানের প্রতি তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই— এ কথা বলেও লক্ষ্মণের বক্তব্য, ‘‘দল কারও জন্য বসে থাকে না। তাই শাহজাহান থাকুন বা না থাকুন, এলাকায় তৃণমূল ভাল ফল করবে।’’ অন্য দিকে, সন্দেশখালি থানার কোরাকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এ বারের তৃণমূল প্রধান মনিকা রায় বলেন, ‘‘ভাইকে ছাড়া আমাদের সংগঠন ঠিকঠাক চলবে না। আমরা ভাইকেই চাই।’’ প্রসঙ্গত, শাহজাহান নিখোঁজ হওয়ার পরে বিরোধীরা দাবি করেন, মনিকার বাড়িতেই কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। যদিও মনিকা তা অস্বীকার করেন।
পরিস্থিতি বুঝে ঘর গোছাচ্ছে বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপি নেত্রী লক্ষ্মী মণ্ডল জানান, তাঁরা দ্রুত ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে শুরু করবেন। সন্দেশখালি ১ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শান্তি দলুই বলেন, ‘‘ন্যাজাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে আমাদের সংগঠনের অবস্থা এখন বেশ ভাল। অবাধে বৈঠক করতে পারছি।’’ সন্দেশখালি ১ ব্লকের সিপিএম নেতা সুনীলকুমার মুনিয়ান বলেন, ‘‘আমরা খুব দ্রুত সন্দেশখালির দুই ব্লক মিলিয়ে মিছিল করব। মানুষ ক্রমশ ভয় মুক্ত হচ্ছে।’’