ছবি: সংগৃহীত।
পরিকাঠামো খাতে সম্প্রতি ১০২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাথমিক পর্বে অন্তত রাজ্য কোনও বরাদ্দ পায়নি। এ রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, কী ভাবে ওই অর্থ খরচ হবে, তার দিশা এখনও অজানা। তাই রাজ্যের হাতে থাকা প্রকল্পের প্রস্তাব-তালিকাও এখনই পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা। তবে আধিকারিকদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, রাজ্যের হাতে সব দিক থেকে প্রস্তুত থাকা প্রকল্প প্রায় নেই বললেই চলে।
রাজ্য অর্থ দফতরের যুক্তি, এখন বেশির ভাগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যেরও অংশীদারি চাইছে কেন্দ্র। কিন্তু নতুন পরিকাঠামো-বরাদ্দের ঘোষণায় প্রকল্প-পিছু কত অর্থ কেন্দ্র দেবে, আর কতটা রাজ্যকে দিতে হবে, তার স্পষ্ট বার্তা আসেনি দিল্লি থেকে। পাশাপাশি, পাঁচ বছর ধরে বার্ষিক ৮ লক্ষ কোটি টাকা পরিকাঠামো খাতে খরচ করার ঘোষণা আগেই করেছে কেন্দ্র। সাম্প্রতিক ঘোষণায় নতুন কী আছে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত নবান্নের সর্বোচ্চ মহল। সেখানকারই এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্র কী ভাবে টাকা দেবে বোঝা যাচ্ছে না। বাজেটে কী থাকে দেখা যাক।’’ অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রকল্পের পরিকল্পনা রাজ্যের হাতে রয়েছে। তবে সেই তালিকা এখনই কেন্দ্রকে পাঠানো হবে কি না, তা শীর্ষমহলের ছাড়পত্র ছাড়া বলা সম্ভব নয়।’’
তবে প্রশাসনের অন্দরে একটি মহল এও দাবি করছেন— কেন্দ্র এখন সেই সব প্রকল্পেই বরাদ্দ দেবে, যেগুলি কাজ শুরুর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। অর্থাৎ, যে প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি, প্রয়োজনীয় জমির পুরোটা হাতে রয়েছে, কোথাও কোনও বাধা নেই—১০০ কোটি টাকার বেশি তেমন প্রকল্পগুলিকেই অগ্রাধিকার দেবে কেন্দ্র। কিন্তু এমন কতগুলো ‘রেডিমেড’ প্রকল্প রাজ্যের হাতে রয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন আধিকারিকদের অনেকেই। সংশ্লিষ্ট মহলটির দাবি, নীতিগত ভাবে রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে না। প্রয়োজনের ভিত্তিতে জমিদাতার থেকে সরাসরি জমি কেনে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে ভাবেও জমি কেনা যাচ্ছে না। এক পূর্ত-কর্তার কথায়, ‘‘পূর্ত দফতরের হাতে কোথায় কত জমি রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশ সম্প্রতি এসেছে। আবার এ-ও বলা হয়েছে, আগে জমির বন্দোবস্ত করে তবে প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: লেবেলে ভুয়ো ঠিকানা, ট্রেনে বিকোচ্ছে জলের বোতল
অন্য দিকে প্রশাসনের অপর একটি অংশের দাবি, গত ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ দফায় দফায় বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছর পর্যন্ত মূলধনী ব্যয় ১১ গুণ বেড়ে পৌঁছেছে ২৩ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকায়। আবার ওই সময়সীমায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ফিজিকাল পরিকাঠামোয় খরচ হয়েছে সাড়ে ন’হাজার কোটি টাকার বেশি। পরিকাঠামো খাতে আরও বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য নিজেই নিরন্তর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা খালি চোখেই ধরা পড়ে। কেন্দ্র সহযোগিতা না করলেও রাজ্য নিজের কাজ করে চলেছে।’’ নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছনোর জন্যই সম্ভবত নতুন করে বরাদ্দের ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এতে যদি অন্তত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হন, তা হলে সেটা কেন্দ্রের বাড়তি পাওনা।’’ রাজ্য প্রশাসনের অর্থ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, দেশের চলতি আর্থিক পরিস্থিতি শোধরাতে পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ খোলাও ছিল না কেন্দ্রের কাছে। আর্থিক ঝিমুনির শুরুতেই তা করা উচিত ছিল।