বাঁধ-ভাসি
Sandeshkhali

কংক্রিটের বাঁধ রুখেছে আমপানের দাপট

জলে ধুয়ে যাবে বাঁধের মাটি, ভাঙবে বাঁধ— এ যেন ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন সুন্দরবনের মানুষ। কেন এই পরিস্থিতি

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০৫:১১
Share:

সাগরের ধবলাট শিবপুর গ্রামের কাছে বঙ্গোপসাগরের আয়লা বাঁধ। নিজস্ব চিত্র

২০০৯ সালে আয়লার পরে যখন বাদল খামারুর দেহ উদ্ধার হল, তখনও ছোট্ট নাতিটার নিথর হাত শক্ত করে ধরা মুঠোয়।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির আতাপুরের বাসিন্দা বাদলের কাঁচা বাড়ির চাল উড়েছিল আয়লার ঝড়ে। রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে দেওয়াল ভেসে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই মেলে দাদু-নাতির দেহ।

পরবর্তী সময়ে বাদলের উঠোনের উপর দিয়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হয়েছে। তার নাম ‘আয়লা বাঁধ।’ আশপাশের কাঁচা বাঁধ তছনছ করলেও আতাপুরের আয়লা বাঁধ টলাতে পারেনি আমপান। ঝড়ে বাড়ি-ঘর উড়েছে। কিন্তু বাঁধে চিড় পর্যন্ত ধরেনি। আয়লায় শুধুমাত্র আতাপুরেই মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। এ বার প্রাণহানি নেই। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘এ রকম ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে পাকা বাঁধ ছাড়া গতি নেই।’’

Advertisement

আয়লা বাঁধ কী?

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীর তলদেশ থেকে গভীরে ৩০ ফুট এবং নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০ উঁচু কংক্রিটের বাঁধই হল আয়লা বাঁধ। নদীর নীচে বাঁধ প্রায় ১০০ ফুট চওড়া। বাঁধের গঠন এমন যে জল কখনওই ধাক্কা খেয়ে উপরে ছিটকে যায় না। নীচ থেকে উপর পর্যন্ত ঢালু বলে জল ধাক্কা খেয়ে গড়িয়ে নেমে যায়। বাঁধের ক্ষতি হয় না। উচ্চতা অনেকটা বলে জল বাঁধ ছাপিয়েও যাওয়ার আশঙ্কা কম।

আরও পড়ুন: জামাটা পাঁজরের ঘামে সেঁটে, মাথায় খাবারের বস্তা, যূথিকাকে ভুলতে পারছি না

হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারিতে সদ্য ভাঙা ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে মাটি পড়ছে। সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন রতন মিস্ত্রি, পরিতোষ মণ্ডলরা। বললেন, “কংক্রিটের বাঁধ যে কতটা দরকার, সেটা আয়লার পরেই বুঝেছিলাম। সরকারও বুঝেছিল। কত জায়গায় কাজ হল। কিন্তু আমাদের এখানে শুরুই হল না।”

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ২৪ পরগনা মিলে ১৪০০ কিলোমিটারের বেশি কংক্রিটের আয়লা বাঁধ হওয়ার কথা ছিল। খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের কয়েকটি জায়গায় এই বাঁধ হয়েছে। কিন্তু না হওয়ার পরিমাণই বেশি। প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্য সরকারের গাফিলতিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সিংহভাগই ফিরে গিয়েছে।

এ কথা মানে না রাজ্যের শাসকদল। আমপানের পরে সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী গিয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায়। তখন বলেছিলেন, কংক্রিটের বাঁধের প্রয়োজনীয়তার কথা মুখ্যমন্ত্রীর অজানা নয়। তিনি এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবেন।

সেচ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আয়লা বাঁধ তৈরির জন্য নদী থেকে প্রায় ১৫০ ফুট জমির প্রয়োজন। সব জায়গায় জমি মিলছে না। কোথাও মালিকেরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সেই জমি জবরদখল করে বাস করছেন অন্যজন। তাঁরা পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। এই কারণে হাসনাবাদের শুলকুনি, সন্দেশখালি বেড়মজুর-সহ ১১টি জায়গায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে আবার কাজ শুরুই করা যায়নি। কারণ ১৫০ ফুট জমি নিতে গেলে পুরো বাজারটাকেই সরাতে হবে। থানা এবং অন্যান্য সরকারি অফিসও রয়েছে এই এলাকার মধ্যে। কংক্রিটের বাঁধের অভাবে আমপানে খুবই ক্ষতি হয়েছে এই সব এলাকায়। হিঙ্গলগঞ্জের চাড়ালখালি, হেমনগর, মাধবকাটিতে যে সব জায়গায় আয়লা বাঁধের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে, সে সব জায়গায় তুলনায় সুরক্ষিত গ্রাম।

(তথ্য: নির্মল বসু, দিলীপ নস্কর, নবেন্দু ঘোষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement