জোট করেও ভোটের ভাবনায় থাকছে কাঁটা

করিমপুর, খড়্গপুর সদর ও কালিয়াগঞ্জ— এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ২৫ নভেম্বর। লোকসভা ভোটের তথ্য বলছে, তিন কেন্দ্রেই বাম-কংগ্রেসের ভোটের হাল করুণ!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩০
Share:

ভূপেশ ভবনে গুরুদাস দাশগুপ্তের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ফাঁকে বাম ও কংগ্রেস নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

কাঠখড় পুড়িয়ে জোট তো হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের কাঁটা রয়ে গিয়েছে!

Advertisement

আসন ভাগাভাগি করে রাজ্যে আসন্ন উপনির্বাচনে লড়তে নেমেছে বাম ও কংগ্রেস। তাদের লক্ষ্য, বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব ভোট এক জায়গায় নিয়ে আসা। কিন্তু কয়েক মাস আগের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান ও সাড়ে তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা চিন্তায় রাখছে জোট শিবিরকে। উদ্বেগের কাঁটা সরাতে তৎপরও হয়েছেন দু’পক্ষের রাজ্য নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, তিন বিধানসভা কেন্দ্রেই বাম ও কংগ্রেসের ভোটের হাল অত্যন্ত করুণ! তাই জোট গড়ে দু’দিকের ভোট এক বাক্সে আনলেও বিশেষ সুবিধা হওয়ার আশা পাটিগণিত অন্তত দেখাচ্ছে না। লোকসভায় করিমপুরে কংগ্রেসের ১০.৮৩%-এর পাশে বামের ভোট ছিল ৮.৬৩%। কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের ৮.২২%-এর পাশে বামের ৮.৫২%। আর খড়গপুর সদরে কংগ্রেস ৫.১৩% এবং বাম ৫.০৬%। সেখানে ওই তিন কেন্দ্রে শাসক তৃণমূলের ভোট যথাক্রমে ৪২.৮৯%, ২৭.৫৩%, ও ২৯.৯৮%। বিজেপি করিমপুরে পেয়েছিল ৩৫.৮৬%, কালিয়াগঞ্জে ৫২.৬৯% এবং খড়গপুরে ৫৮.%। অর্থাৎ শেষ দুই কেন্দ্রে লোকসভার নিরিখে বিজেপির ভোট এমন জায়গায় আছে, তর্কের খাতিরে বাকি তিন দলের ভোট একত্রে আনা গেলেও সম্মিলিত ভাবে তাদের পিছিয়ে থাকতে হয়!

Advertisement

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদর আসন কোনও কালেই তাঁদের ছিল না। তাই এ বার ওই দুই আসন জিততে না পারলেও তৃণমূলের ক্ষতি বলা যাবে না। কিন্তু বাম ও কংগ্রেসের জন্য উদ্বেগের কারণ, লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে এই উপনির্বাচনে ভোট বাড়াতে না পারলে জোটের যৌক্তিকতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠবে। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট, দুই পক্ষের অন্দরেই জোটের বিরুদ্ধে সওয়াল করার মুখ ছিল। সেই কাঁটা নির্বিষ করে সামনে এগোতে গেলে উপনির্বাচনে জোটের খাতায় ‘যোগ’ দেখাতে হবে।

প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোট মানে শুধুই পাটিগণিত নয়। ঠিকমতো জোট গড়তে পারলে একটা রসায়ন তৈরি হয়। সেটাই এখন জরুরি।’’ কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বাম শরিক দলের নেতারা এই জন্যই মনে করছেন, দু’পক্ষের যৌথ মঞ্চ আগেই গড়ে ফেলা দরকার। তা হলে আন্দোলনের রাস্তায় দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে এগোনো যাবে।

বিগত বিধানসভা নির্বাচনে সমঝোতা করে কংগ্রেস ফল যতটা ভাল হয়েছিল, বামেদের ঝুলি সে ভাবে ভরেনি। কংগ্রেসের ভোট বাম বাক্সে পড়া (ট্রান্সফার) নিয়ে বাম শিবিরে তখন থেকেই সংশয় আছে। বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করেন, বামেদের ভোট তুলনায় মসৃণ ভাবে ‘হাত’ চিহ্নে হস্তান্তর হয়েছে। এ বার বাম নেতারা প্রথমেই এই সংশয়ের কথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র তাঁদের বলেছেন, বামেদের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ দল কংগ্রেস নয়। চেষ্টা করতে হবে বামেদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার সঙ্গে কংগ্রেসের আবেগকে বাঁধতে।

পরিস্থিতি বিচার করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দু’দলের ভোটের হার বাড়ানোই আপাতত নির্বাচনে প্রথম লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement