সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক সদস্যপদের দৌড়ে ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে ‘মান’ বেঁচেছে। বিজেপি সূত্রের দাবি তেমনই। কিন্তু সক্রিয় সদস্যপদ অভিযানে ‘লক্ষ্য’ এখনও দূরে। ‘লক্ষ্য’ ছিল ৭০ হাজার সক্রিয় সদস্য। মাপকাঠি ছিল, দলের যে কর্মীরা ৫০ জন করে প্রাথমিক সদস্য জোগাড় করতে পারবেন, তাঁরাই পাবেন ‘সক্রিয়’ সদস্যপদ। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, সে মাপকাঠি স্পর্শ করতে পারেননি অনেকেই। তবে যথেষ্ট সংখ্যক বুথে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গড়তে হলে সক্রিয় সদস্যসংখ্যার সঙ্গে আপস করা কঠিন। তাই মাপকাঠির নীচে থেকে যাওয়া কর্মীদের জন্য নিয়ম ‘শিথিল’ করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নতুন করে ‘নম্বর’ বড়ানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে হাজার ত্রিশেক কর্মীকে।
রাজ্যে ৮০ হাজারের মতো বুথ। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে দাবি করছেন, সব বুথেই কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু জনান্তিকে বিজেপির অনেকে জানাচ্ছেন, সাড়ে ১৭ হাজারের মতো বুথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের আধিক্য। সে সব এলাকায় বুথ কমিটি গঠন করা হয়ে উঠবে না। বাকি থাকে ৬২ হাজারেরও বেশি বুথ। ২৫ জানুয়ারির (অর্থাৎ শনিবার) মধ্যে বুথ স্তরে সভাপতি বাছাইয়ের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হলে অন্তত সাড়ে ৬২ হাজার বুথ সভাপতি তথা সক্রিয় সদস্য ইতিমধ্যেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, সে সংখ্যায় পৌঁছনো যায়নি।
২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপিতে সক্রিয় সদস্য নথিভুক্তির সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজারের আশেপাশে। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এই হিসেব সম্পর্কে প্রকাশ্যে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলছেন না। সদস্যপদ অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য আমরা পূরণ করতে পেরেছি কি না, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন আমাদের নেই। বরং সংবাদমাধ্যমই আমাদের সদস্যসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছে। এর থেকেই বোঝা যায় এই অভিযান কতটা সফল।’’ শমীক ‘সাফল্যের হিসাব’ দিলেও দলের সক্রিয় সদস্যসংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৪৩ হাজার হয়ে থাকলে সংখ্যালঘু প্রধান বুথ ছাড়া সর্বত্র বুথ কমিটি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কী করে?
বিজেপি সূত্রের খবর, লক্ষ্য পূরণে সময়সীমা শিথিল করে সংখ্যা জোগাড়ের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
সময়সীমা দু’টি ক্ষেত্রে শিথিল করতে হচ্ছে। প্রথমত, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বুথে সভাপতি বাছাই সেরে ফেলার যে কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছিল, সেই অনুযায়ী চলা সম্ভব না হওয়ায় বুথ সভাপতি বাছাই তথা কমিটি গঠনের জন্য সময় বাড়াতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যে সময়সীমার মধ্যে ৫০ জন করে প্রাথমিক সদস্য জোগাড় করতে বলা হয়েছিল সক্রিয় সদস্যপদ পেতে ইচ্ছুক কর্মীদের, তা-ও বাড়ানো হচ্ছে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এমন প্রায় ৩০ হাজার কর্মী রয়েছেন, যাঁরা ৫০ জন করে প্রাথমিক সদস্য জোগাড় করতে পারেননি। কিন্তু ৩০-এর উপর জোগাড় করেছেন। ওই কর্মীদের আবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের দিয়ে ৫০ প্রাথমিক সদস্য জোগাড়ের লক্ষ্য পূরণ করিয়ে নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি সফল হলে সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ৭০ হাজারে পৌঁছে যাবে।
২১ জানুয়ারি বিজেপির বিশেষ সাংগঠনিক কর্মশালায় সাংগঠনিক নির্বাচনের সময়সীমা ধাপে ধাপে বেঁধে দেওয়া হয়। বলা হয়, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বুথ স্তরের নির্বাচন, ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মণ্ডল স্তরের নির্বাচন এবং ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা সভাপতি নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল সেই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৫ জানুয়ারির মধ্যে মেরেকেট ৩৫ হাজারের মতো বুথে সভাপতি নির্বাচন এবং কর্মী বাছাই করা গিয়েছে বলে যুব মোর্চার এক প্রাক্তন শীর্ষনেতার দাবি। সময়সীমা শিথিল করার পরে সেই সংখ্যা কতটা বাড়তে পারে, তা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নাগাদ স্পষ্ট হতে পারে।
সময়সীমা বা মাপকাঠি ‘শিথিল’ করে সক্রিয় সদস্য বাড়ানো সাফল্যের ইঙ্গিত, না এখনও নানা দুর্বলতায় ভুগতে থাকার সঙ্কেত? সরাসরি জবাব এড়িয়ে শমীক বলেছেন, ‘‘আমরা নিজেদের সামনে কী টার্গেট রেখেছি, কী মাপকাঠি নির্দিষ্ট করেছি, সেগুলো আমরাই সবচেয়ে ভাল জানি। এগুলো নিয়ে দলের বাইরে আলোচনা করব না। শুধু বলব, সাংগঠনিক লক্ষ্যমাত্রা আমরা সফল ভাবেই পূরণ করব। তার জন্য কোনও মাপকাঠির সঙ্গে কোনও আপস করা হচ্ছে না।’’