প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বিধান ভবনে অধীর চৌধুরী (ডান দিকে) ও আব্দুল মান্নান (মাঝে)। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরা তৃণমূল বা বিজেপিতে গিয়েছেন, তাঁদের দলে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানালেন প্রদেশ কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই সঙ্গেই তাঁর আশ্বাস, দলে ‘গোষ্ঠী-বিচার’ই শেষ কথা হবে না। তবে দিল্লিতে ব্যস্ততা সামাল দিয়ে স্বয়ং প্রদেশ সভাপতি কতটা সময় বাংলার কংগ্রেসকে দিতে পারবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়, গনিখান চৌধুরী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পরে অধীর ফের দিল্লিতে বড় দায়িত্বের পাশাপাশি বাংলায় সভাপতিত্ব পেলেন। সংসদের অধিবেশনের কারণে এ মাসে তাঁর আর কলকাতায় ফেরার সম্ভাবনা কম। লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে অন্য সময়ে প্রতি সপ্তাহান্তেও তিনি কলকাতায় আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
তা হলে কি কংগ্রেসে ‘পরিযায়ী সভাপতি’র সংস্কৃতি ফিরে এল? অধীর অবশ্য বলছেন, ‘‘সংসদের অধিবেশন ছাড়া অন্য সময়ে বাংলায় বেশি নজর দিতে হবে। তবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সুবিধা হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে থাকলেও যোগাযোগ রাখব।’’ যদিও বিধানসভা ভোটের আগে এই ‘ভার্চুয়াল মডেল’ কতটা কার্যকর হবে, সেটা প্রশ্ন।
সাংগঠনিক দিক থেকে কংগ্রেসের সমস্যা দু’রকম। কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী বেশ কিছু বিধায়ক যেমন তৃণমূল এবং পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তেমনই গোষ্ঠী রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে অনেকে দল ছেড়েছেন বা বসে গিয়েছেন। এঁদের সকলের জন্যই ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন অধীর। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সকলকে আবেদন জানাচ্ছি ফিরে আসার। কিন্তু ফিরে এলেই যে সকলে টিকিট পাবেন, এমন কোনও কথা দিতে পারছি না!’’
আরও পড়ুন: জোটেই ‘জবরদস্ত টক্কর’, বামকে বার্তা কংগ্রেসের
এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের যে বিজ্ঞপ্তিতে অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাতে সোমেন মিত্রের রাজনৈতিক পরম্পরা ও অবদান স্মরণে রাখার কথাও বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আসলে দলের সকলকে নিয়ে চলার বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে কংগ্রেসের অন্দরে অনেকের মত। অধীরও এই পর্বে এআইসিসি-কে বলেছেন, যিনি সভাপতি থাকেন, কাজের সুবিধার্থে তাঁর কিছু ‘কাছের লোক’ এবং ‘টিম’ তৈরি হয়। জমানা বদল হলেই পুরনো ‘টিমে’র সকলকে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। এই ‘ধারা’ বদলানোর কথা বলেছিলেন অধীর।
আরও পড়ুন: বেজিংকে বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বায়ুসেনায় রাফালের যোগ, চুপ প্রধানমন্ত্রী
এ বার নিজেই দায়িত্ব পেয়ে তিনি কী করবেন? অধীরের মন্তব্য, ‘‘কারও সঙ্গে নীচতা দেখাতে আসিনি! সকলকে নিয়েই চলতে চাই। তবে শুধু খাতির করলেই তো চলবে না, কাজও চাই! সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’’ যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এবং সোমেন-পুত্র রোহন মিত্র এ দিনই অধীরের নেতৃত্বে কাজ করার ‘অঙ্গীকার’ করেছেন।
আব্দুল মান্নান, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীরা নিজেরা এসে অধীরকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রদেশ সভাপতির দৌড়ে নাম থাকলেও প্রদীপ ভট্টাচার্য ‘দলের সৈনিক’ হিসেবে সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন।