দীপক সরকারের বাড়ি।
নেহাতই সাদামাটা সাংবাদিক বৈঠকে হঠাৎ চমক!
শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল ‘মেদিনীপুর পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক’। ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সুকুমার পড়্যা জানাচ্ছিলেন, বাম আমলের চেয়ে কতটা মসৃণ গতিতে এগোচ্ছে ব্যাঙ্ক। সেখানেই জানা গেল, মেদিনীপুরের এক সময়ের ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সিপিএম নেতা দীপক সরকারের আদি বাড়ির দখল নিয়েছে সমবায় ব্যাঙ্ক। চমক এখানেই শেষ নয়। সুকুমার আরও জানান, আর এক সিপিএম নেতা সুকুর আলিরও একটি বাড়ির দখল নেবে ব্যাঙ্ক। সুকুমারের কথায়, ‘‘অনাদায়ী ঋণ আদায়ে ব্যাঙ্ক বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ঋণ নিয়েছিলেন দীপকের ভাই জয়ন্ত সরকার এবং সুকুরের ছেলে হসরত আলি। জয়ন্ত ঠিকাদারি করেন। ২০০৯ সালে তিনি ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৩ টাকা। আর হসরত ২০০৮ সালে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। তাঁর বকেয়া ঋণ ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। জয়ন্ত তাঁদের মেদিনীপুর শহরের মীরবাজারের আদি বাড়ি বন্ধক রেখেছিলেন। হসরত বন্ধক রেখেছিলেন গড়বেতার খড়কুশমার মঙ্গলাপোতার বাড়ি।
ব্যাঙ্কের দাবি, জয়ন্তকে বেশ কয়েকবার ঋণ শোধের কথা বলা হয়েছিল। তিনি শোনেননি। এরপরই সমবায় দফতরের দ্বারস্থ হয় ব্যাঙ্ক। মামলা হয়। মামলায় জেতে ব্যাঙ্ক। সুকুমার বলেন, ‘‘মীরবাজারের ওই বাড়িটির নিলাম ডাকা হয়েছিল। কেউ অংশ নেননি। পরে ব্যাঙ্কই বাড়িটির দখল নিয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই গড়বেতার বাড়ি বিক্রির জন্য চূড়ান্ত নোটিস দেওয়া হবে। দীপক আগে মীরবাজারের বাড়িতেই থাকতেন। পরে বিধাননগরে চলে যান। আর খড়কুশমার বাসস্ট্যান্ডের বাড়িটি সুকুরের ছেলের নামে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক থাকাকালীন দীপকের দাপট কেমন ছিল তা নিয়ে এখনও চর্চা চলে রাজনৈতিক মহলে। আর সুকুর ছোট আঙারিয়া মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলাতেও আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সিপিএমের তৎকালীন দাপুটে মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন সুকুর। যে সমবায় ব্যাঙ্ক দীপকদের বাড়ির দখল নিচ্ছে, তার পরিচালন সমিতিও দীর্ঘদিন সিপিএমের দখলে ছিল। ২০১৫ সালে তা তৃণমূলের হাতে আসে।
প্রতিক্রিয়া জানতে জয়ন্তকে ফোন করা হলে তা সুইচড অফ ছিল। জবাব মেলেনি এসএমএসেরও। তবে দীপক বলেন, ‘‘এক সময়ে ওখানে থাকতাম। বছর দুয়েক আগেই ওই বাড়িটি ভাইকে ছেড়ে দিয়েছি। তারপর কী হয়েছে বলতে পারব না।’’ হসরতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঋণ শোধের চেষ্টা করব বলেছিলাম। তাও কেন এই পদক্ষেপ বুঝছি না।’’ সুকুর অবশ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ তুলছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে তিন বছর ঘরছাড়া থাকায় ঋণ শোধ করা যায়নি। মাস দেড়েক আগে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা দেওয়াও হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে আমরা আদালতে যাব।’’