বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ কেলেঙ্কারির জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে যেতে হবে বলে দাবি করেছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারেরা। এ বার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারের সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করার দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর প্রশ্ন, সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে বা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা জেরা করতে পারলে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও তা হবে না কেন? একই দাবি তুলেছে সিপিএমও। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, মোদী বা অমিত শাহেরা যে জেরার মুখে পড়েছিলেন, তা বিরোধী দলের ‘উস্কানি’র ফলে নয়। বিজেপির কথাতেই যদি কেন্দ্রীয় সংস্থা চলে, তা হলে দেশের সামনে গভীর সঙ্কট বলেও মনে করছে তারা। পরিস্থিতির প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়ে রেখেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
মানিককে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, মানিকের হেফাজত থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির সন্ধান মিলেছে, যেখানে টাকার বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ জানানো হয়েছে। এই চিঠির কথা বলেই বিরোধীদের দাবি, তার মানে মুখ্যমন্ত্রী এই কেলেঙ্কারির বিষয়ে অবহিত ছিলেন। মানিকের মোবাইলে থাকা সাঙ্কেতিক নাম ‘ডিডি’ এবং ‘আরকে’ নিয়েও সরব বিরোধীরা। তাদের দাবি, ‘ডিডি’ মানে ‘দিদি’ই। যে অভিযোগকে আগেই ‘কাল্পনিক’ বলেছে তৃণমূল।
এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থা মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যে কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করেছে, বলা হচ্ছে সেখানে একটি চিঠির উল্লেখ রয়েছে। চিঠির প্রেরক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি চিঠি লেখেন। যার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে মানিকবাবুকেও। সেখানে বলা হয়েছে, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থী পিছু ৭ লক্ষ টাকা করে তিনি তুলেছেন।” এর সঙ্গেই শুভেন্দুর দাবি, ‘‘ওই চিঠি এবং মোবাইলে ডিডি-আরকে নিয়ে তদন্ত হোক। পার্থ-অর্পিতার গ্রেফতারের পরে প্রথমে নজরুল মঞ্চে এবং তার পরে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এ সব যে হয়েছে, উনি জানতে না। এখন বোঝা যাচ্ছে, সেই কথা ঠিক নয়। উনি ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছেন। তাঁকে জেরা করা উচিত।’’ বিরোধী দলনেতার সংযোজন, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে যখন সময় দেবেন, সেখানেই তদন্তকারীদের যাওয়া উচিত। প্রয়োজনে ই-মেল করে প্রশ্নমালা পাঠানো উচিত। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গায় জেরা হওয়া উচিত। আমি বিচার বিভাগ এবং এবং তদন্তকারীদের কাছে আবেদন করছি, এই ষড়যন্ত্রের পুরোটা সামনে আসা উচিত।’’
বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা নিশানা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে ইডি, সিবিআই কি শুভেন্দুর কথায় চলছে? যদি তা হয়, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের! এবং বুঝতে হবে, গোটা দেশ আজ গভীর সঙ্কটে পড়েছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ দাঙ্গার ঘটনায় তদন্তের মুখে পড়েছিলেন। বিরোধী দলের উস্কানির ফলে নয়। তদন্ত নিরপেক্ষ না হলে আমাদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।’’ শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘শেষ নির্বাচন বাদে রাজনৈতিক জীবনে শুভেন্দু যত ভোটে লড়েছেন, প্রত্যেকটিতেই মমতার ছবি সামনে রেখে জিতেছেন। তাঁর সেই সততার ভাবমূর্তি নিয়ে আজ তিনি প্রশ্ন তুলছেন!’’
মুখ্যমন্ত্রীকে তদন্তের আওতায় এনে জেরার দাবি তুলেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, বললে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী নামে চিঠি, সেখানে নিয়োগ পিছু ৭ লক্ষ করে টাকা নেওয়ার কথা বলা আছে। জানা যাচ্ছে, সেই চিঠি মানিকের বাড়ি থেকে পাওয়া যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন? নাকি টাকার ভাগ আছে বলে ছেড়ে দিয়েছেন?’’ সুজনবাবুর আরও দাবি, ‘‘মানিকের মোবাইলে ‘ডিডি’র অনুমোদন আছে বলে বার্তা আছে। ‘ডিডি’ মানে তো দিদি! মানিকের অপরাধের দায় মুখ্যমন্ত্রী অস্বীকার করতে পারেন না। অবিলম্বে তাঁকে ডাকা এবং জেরা করা উচিত।’’