উত্তরকন্যা নিয়ে চিন্তায় কোচবিহার

তৃণমূল সূত্রেই খবর, বিজেপির উত্থানে কোচবিহারে একদিকে থমকে গিয়েছে উন্নয়নের কাজ, আরেক দিকে, প্রত্যেকদিন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে জেলায়। এমনকি তৃণমূলের বিধায়ক-মন্ত্রীরা কেউই পুলিশ ছাড়া গ্রামে যেতে পারছেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে উত্তরকন্যায় কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’টি জেলাতেই লোকসভা ভোটে পরাজিত তৃণমূল। দুই জেলাতেই সেই ভোটের প্রচারে গিয়েও মমতা বারবার উন্নয়নের খতিয়ান দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এ বার প্রশাসনিক বৈঠকে, ফের সেই উন্নয়নের প্রশ্নই উঠে আসবে সামনে। কতটা কাজ হয়েছে, কী কী ক্ষোভ রয়েছে, সে সব কথাই আলোচনায় আসার কথা। এ বার মমতা উন্নয়নের প্রশ্নে আরও কড়া অবস্থান নেবেন বলেই অনুমান করছেন তৃণমূলের নেতারাই। তাই মমতার কড়া প্রশ্নের সামনেই পড়তে পারেন সরকারি আধিকারিকেরা। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে জেলায় তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়কদেরও। তাই তাঁদেরও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

Advertisement

অথচ, তৃণমূল সূত্রেই খবর, বিজেপির উত্থানে কোচবিহারে একদিকে থমকে গিয়েছে উন্নয়নের কাজ, আরেক দিকে, প্রত্যেকদিন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে জেলায়। এমনকি তৃণমূলের বিধায়ক-মন্ত্রীরা কেউই পুলিশ ছাড়া গ্রামে যেতে পারছেন না। কোচবিহার এমন অবস্থা চলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে হারের পর থেকেই।

এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কী জানতে চাইবেন, তা নিয়েই আপাতত ঘুম ছুটেছে সবার। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সোমবারই শিলিগুড়ি পৌঁছন। তিনি ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা নির্দেশ মতোই কাজ করেছি। সে তথ্য আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি।”

Advertisement

কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে একাধিকবার পুলিশ সুপার পরিবর্তন করা হয়। নির্বাচন পর্বে অভিষেক গুপ্তকে সরিয়ে দিয়ে অমিত সিংহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভোটপর্ব মিটে গেলেই ফিরিয়ে আনা হয় অভিষেক গুপ্তকে। পরে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় সন্তোষ নিম্বালকরকে। অতিরক্ত পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় সানা আকাতারকে। তার পরেও প্রায় প্রতিদিন রাজনৈতিক গন্ডগোল চলছে জেলায়। দিন কয়েক আগে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাতেও বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এবারে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দুই দিন আগে জেলাশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কৌশিক সাহাকে। সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয় পবন কাদেয়ানকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, কৌশিক সাহা আইএএস পদে উন্নীত হওয়ার জন্যই তাঁকে সরিয়ে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার সময়ে জেলা দুই বছর পুরস্কার পেয়েছে।

দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার গত আট বছর ধরে তৃণমূলের ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিল। এ বারে লোকসভায় হারের পরে তা ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, একদিকে জেলায় উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সেই সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে কোনও ভাবে না হয় সেই ব্যবস্থা করা। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিজেপির দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তৃণমূল। বিজেপির দাবি, বিজেপি পঞ্চায়েতে যাতে দুর্নীতি না হয় সেদিকে নজর রাখতেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপিই দুর্নীতির চেষ্টা করেছে।

তৃণমূলের দাবি, এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, জেলায় কথায় কথায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। প্রশাসন তা বন্ধ করতে ব্যর্থ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement