এসএসকেএম হাসপাতালে ঢোকার মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ হাঁটুর লিগামেন্টে চোট লেগেছে। চোট রয়েছে তাঁর বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টেও। মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর এমনটাই জানিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে মমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই চলবেন। তবে হাসপাতালে থেকে নয়, মুখ্যমন্ত্রী সবটা বাড়িতে থেকেই করবেন। এমনটাই জানিয়েছেন মণিময়।
মঙ্গলবার দুপুরে আবহাওয়া খারাপ থাকায় সেবক এয়ারবেসে জরুরিকালীন অবতরণ করেছিল মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। প্রাথমিক জানা গিয়েছিল, ওই ঘটনায় পা এবং কোমরে চোট পেয়েছেন তিনি। এর পর বাগডোগরা থেকে বিমানে কলকাতা পৌঁছে সোজা এসএসকেএমে পৌঁছন মমতা। সেখানে তাঁর এমআরআই পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষাতেই জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বাঁ হাঁটুর লিগামেন্টে চোট লেগেছে। চোট পেয়েছেন বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টেও। মুখ্যমন্ত্রীকে হাঁটুতে পরার নিক্যাপ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁর থেরাপি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত হাঁটাচলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দরে মমতার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজের গাড়িতেই হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। হাসপাতালে তিনি পৌঁছলে হুইলচেয়ার এগিয়ে দেন সেখানকার কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী যদিও হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে সম্মত হননি। গাড়ি থেকে নামার সময় শরীরের ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে দেখা যায় তাঁকে। তখনই তাঁকে ধরে নেন হাসপাতালের এক মহিলা কর্মী। মমতাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন। স্পষ্ট বোঝা যায়, তাঁর হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর আগেই সেখানে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা,স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার চোট কতটা তা পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। তাঁর এমআরআই পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি রাখা ছিল উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দেখা যায়, হুইলচেয়ারে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এসএসকেএমের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে মণিময় জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভর্তি হতে সম্মত হননি। চিকিৎসকদের সমস্ত পরামর্শ তিনি বাড়িতে থেকেই মেনে চলবেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ির মালবাজারে মুখ্যমন্ত্রীর পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারসভা ছিল। সভা শেষ করে জলপাইগুড়ির ক্রান্তি থেকে বাগডোগরার উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদার এবং মুখ্যমন্ত্রীর দেহরক্ষী স্বরূপ গোস্বামী। মাঝপথে আকাশ কালো করে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। তিন দিকের আকাশ কালো করে আসে। পাইলট বোঝেন এগোনো ঠিক হবে না। নীচে বৈকণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল থাকায় তিনি তখনই কপ্টার নামাতে পারেননি। বাগডোগরার দিকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। অগত্যা তিনি গতিমুখ পরিবর্তন করে উড়তে থাকেন শিলিগুড়ির দিকে। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে শালুগাড়ার কাছে সেবক এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। বস্তুত, ওখানে যে কোনও এয়ারবেস রয়েছে, তা কারওরই সে ভাবে জানা ছিল না। অনেকটা কপালজোরেই এয়ারবেসটি চোখে পড়ে পাইলটের। সেখানে জরুরি অবতরণ করেন তিনি।
এর পর মুখ্যমন্ত্রী-সহ কপ্টারের অন্য যাত্রীদের ওই এয়ারবেসের কর্তারা নিরাপদে কাছের সেনা কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁদের রাখা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শালুগাড়ার সেনা কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়ি পাঠানো হয়। সেই গাড়িতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সঙ্গীরা বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা হন। বিকেলে বাগডোগরা থেকে বিমানে কলকাতায় ফেরেন মমতা। বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রী সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে যান।