হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
দুর্যোগের মুখে পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চায়েতের প্রচারসভা শেষের পরে জলপাইগুড়ির ক্রান্তি থেকে বাগডোগরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝপথে আকাশ কালো করে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। পাইলট সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারের মুখ ঘুরিয়ে যে দিকে আকাশ পরিষ্কার, সে দিকে উড়তে শুরু করেন। তলায় বৈকণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল থাকায় তিনি তখনই কপ্টার নামাতে পারেননি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেবকের এয়ারবেসটি দেখতে পান পাইলট। সেখানেই জরুরি অবতরণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা নিরাপদে রয়েছেন। বিকালে তাঁদের বাগডোগরা থেকে বিমানে কলকাতায় ফেরার কথা। মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার জরুরি অবতরণ করার পর মমতার খবর নেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবনের তরফে টুইট করে সে কথা জানানো হয়।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মালবাজারে সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুর ১টা নাগাদ সেই সভা শেষ হয়। তার পর ক্রান্তি থেকে হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরার অভিমুখে রওনা দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই কপ্টারে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী স্বরূপ গোস্বামী এবং সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদার। ঠিক ছিল, হেলিকপ্টারে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকে বিমানে কলকাতা ফিরবেন সকলে।
কিন্তু মাঝ আকাশে বিপত্তি দেখা দেয়। ক্রান্তি থেকে বাগডোগরা কপ্টারে যেতে সময় লাগার কথা ছিল ১৩ মিনিট। আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, উড়ানপথে আবহাওয়া সামান্য খারাপ থাকতে পারে। কিন্তু পাইলট জানান, তিনি বাগডোগরা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারবেন। কিন্তু ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রবল দুর্যোগের মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিন দিকের আকাশ কালো করে আসে। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। পাইলট বোঝেন, আর এগোন ঠিক হবে না। কিন্তু তখন নীচে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল। ফলে অবতরণ করার উপায়ও ছিল না।
আকাশের যে দিকে পরিষ্কার ছিল, অর্থাৎ, গতিপথ দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল, সেদিকেই কপ্টারের মুখ ঘোরান পাইলট। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না, কোথায় অবতরণ করবেন। বাগডোগরার দিকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। অগত্যা তিনি উড়তে থাকেন শিলিগুড়ির দিকে। শেষপর্যন্ত শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে শালুগাড়ার কাছে সেবক এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। বস্তুত, ওখানে যে কোনও এয়ারবেস রয়েছে, তা কারওরই সে ভাবে জানা ছিল না। অনেকটা কপালজোরেই এয়ারবেসটি চোখে পড়ে পাইলটের। সেখানে জরুরি অবতরণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী-সহ কপ্টারের অন্য যাত্রীদের ওই এয়ারবেসের কর্তারা নিরাপদে কাছের সেনা কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁদের রাখা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়, সকলেই নিরাপদে রয়েছেন। কারও কোনও ধরনের চোট-আঘাত লাগেনি। তবে বড় ধরনের বিপর্যয় যে ঘটতে পারত, তা নিয়ে আধিকারিকেরা নিঃসন্দেহ।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শালুগাড়ার সেনা কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়ি পাঠানো হয়েছে। সেই গাড়িতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা বাগডোগরা বিমানবন্দরে রওনা হবেন। সেখান থেকে বিমানে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবেন তাঁরা।