রবিবার উত্তরবঙ্গে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক থেকে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি তাঁরা। আবারও লোকসভা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিতে পারে তাঁরাই। কিন্তু এ বার আর সেই প্রতিশ্রুতিতে ভুললে চলবে না। এমনই সাবধানবাণী শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার আলিপুরদুয়ারের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এমনটাই বললেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মালদহ দক্ষিণ আসনটি বাদ দিয়ে সবক’টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তাই এ বার অনেক আগে থেকেই উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক অস্ত্রে শান দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন মমতা। সেই লক্ষ্যেই উত্তরবঙ্গের জন্য ঝাঁপি উপুড় করে পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি, নতুন আশ্বাসে ভরিয়ে দিলেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘মজদুর ফ্যামিলির লোকজনের সঙ্গে আমি রয়েছি। আমি বিজেপি নই যে বলব সব চা বাগান খুলে দেব। মোদী সরকারের মতো নই। আগের বার ওরা বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে অ্যাকাউন্টে দেবে। এ বার লোকসভা ভোটের আগে ফের শুরু হবে। ওদের বিশ্বাস করবেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘১০০ দিনের টাকা পাচ্ছি না । আবাসের টাকাও বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্র সরকার সব টাকা নিয়ে যায়। আমাদের জিএসটি ট্যাক্স ওরা নিয়ে যায়। আর আমাদের শেয়ার দিচ্ছে না। আমি দিল্লি যাচ্ছি। ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আমি পিএম-এর কাছে সময় চেয়েছি। না দিলে বলব টাকা দাও, না হলে গদি ছাড়ো। এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।’’
উত্তরবঙ্গের জনতার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চা বাগানের শ্রমিকদের পাট্টা দেব। আজ ছ’হাজার পাট্টা দেওয়া হবে। আমরা অনেক জমি অধিগ্রহণ করেছি। আমি জেলাশাসককে বলব যাঁদের জায়গা মেলেনি তাদের নাম নিয়ে পাট্টা দেবেন। মোট ১৩ হাজার পাট্টা দেব। বাকি জায়গায় সমীক্ষা করে দেব। চা সুন্দরীর বদলে এক লক্ষ হাজার টাকা দেব পাট্টার সঙ্গে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে সকল চা বাগান বন্ধ রয়েছে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের অসুবিধা হচ্ছে। ওঁদের মাসে মাসে দেড় হাজার টাকা দিন। পানীয় জল, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আগামী ১২ ডিসেম্বর এক কোটি ২০ লক্ষ কৃষক কৃষিবন্ধুর টাকা পাবেন। আর আলিপুরদুয়ারের ৯০ হাজার কৃষকের খরিফ চাষের টাকা ঢুকে যাবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। দু’বারে মোট ১০ হাজার টাকা পাবেন তাঁরা।’’
মমতা বলেন, ‘‘একটা বাড়িতে পাঁচটা বউ থাকলে পাঁচ জনই লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন, এটা মনে রাখবেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা পাচ্ছি না। বাংলার বাড়ির টাকাও দিচ্ছে না। এটা ওদের টাকা নয়। সব ট্যাক্স তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শেয়ারের টাকা দিচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আদিবাসী যাঁদের সার্টিফিকেট নেই, তাঁদের এক জনের থাকলে দুয়ারে সরকারে আসতে বলুন। সকলকে সার্টিফিকেট দিন। অনেক নকল সার্টিফিকেট হয়েছে। সেগুলির রিভিউ হবে। নকল হলে বাতিল হবে।’’ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতো উত্তরবঙ্গ থেকে এ বারের লোকসভা ভোটে খালি হাতে ফিরতে নারাজ মমতা। তাই অনেক আগে থেকেই সরকারি প্রকল্পগুলি উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক মানুষগুলির কাছে পৌঁছে দিয়ে ভোটের ‘ডিভিডেন্ড’ ঘরে তুলতে চাইছেন মমতা।