TMC Congress

তিন রাজ্যে বিপর্যয়ের পরে নমনীয় কংগ্রেস, লোকসভা ভোটে আসন সমঝোতার প্রাথমিক আলোচনা শুরু

কংগ্রেস সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে রাহুল গান্ধীর। বিরোধী জোটকে মজবুত করার পাশাপাশিই কথা হয়েছে সম্ভাব্য আসন সমঝোতা নিয়েও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৮
Share:

সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে হারের পরে কি সম্বিত ফিরল কংগ্রেসের? সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে হারের পর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই ‘নমনীয়’ মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে তারা। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের নেতা-নেত্রীর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়ে করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হারের পর সেই দর কষাকষিতে ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত আঞ্চলিক দলগুলি ‘সুবিধাজনক’ অবস্থানে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারে লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশ কুমারদের সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে কংগ্রেসকে ‘চাপে’ রাখার।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পাঁচ রাজ্যে ফলঘোষণার অব্যবহিত পরেই তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, তিন রাজ্যে বিজেপি জেতেনি, কংগ্রেস হেরেছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরির’ মনোভাব না ছাড়ার অভিযোগ উঠেছিল ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের মধ্য থেকে। তার পরে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের তড়িঘড়ি ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকা, তাতে মমতা-অখিলেশ-নীতীশদের ‘না’ বলা এবং তা পিছিয়ে দেওয়া দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল, কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ বাড়তে শুরু করেছে। তার ফল: লোকসভার লক্ষ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করে দিল কংগ্রেস। যে কথা অনেক আগেই ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে বলেছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই সময়ে তাতে রাজি হননি কংগ্রেস নেতৃত্ব।

দিল্লির কংগ্রেস সূত্রে খবর, আসন সমঝোতা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেত্রী মমতার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে রাহুল গান্ধীর। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে রাহুল ফোন করেছিলেন মমতাকে। বেশ খানিক ক্ষণ কথা হয় দু’জনের। কংগ্রেস সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটে বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে তিনটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে প্রাথমিক সম্মতির কথা জানিয়েছে কালীঘাট। তিনটি আসনের মধ্যে দু’টি হল অধীর চৌধুরীর বহরমপুর এবং আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) মালদহ দক্ষিণ। তৃতীয় আসনটি হল উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ। এই তিনটি আসন নিয়ে সমঝোতা কার্যত চূড়ান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। ১৮ তারিখে দিল্লি যাবেন বলে শনিবার জানিয়েছেন মমতা। সেখানে তিনি ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দেবেন। যে বৈঠক মূলত রাজ্যে রাজ্যে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়েই ডাকা হয়েছে। সব পরিকল্পনা মতো চললে ওই বৈঠকেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের তিনটি আসন চূড়ান্ত হয়ে যাবে। বড়জোর চতুর্থ একটি আসনের দাবি করতে পারে কংগ্রেস। তবে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

Advertisement

যে তিনটি আসন নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে, তার মধ্যে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ কংগ্রেসেরই আসন। তবে ২০১৯ সালে রায়গঞ্জে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট কাটাকাটির জেরে জিতেছিলেন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। যিনি কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। রায়গঞ্জে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পরে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি প্রার্থী হতেন। ২০০৯ সালে রায়গঞ্জ থেকে তিনি প্রথম বার জিতে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি হেরে যান কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির জেরে। জেতেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। সে অর্থে রায়গঞ্জ বরাবর কংগ্রেসেরই আসন। তৃণমূল ওই আসনে কখনও জেতেনি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রায়গঞ্জে দীপাই প্রাথমিক পছন্দ থাকবেন কংগ্রেসের। কারণ প্রথমত, আসনটি দীপার আগে জেতা। দ্বিতীয়ত, দীপা হিমাচল প্রদেশ ও তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের তরফে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিলেন। দু’টি রাজ্যেই জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তাই তাঁকে রায়গঞ্জে ফের প্রার্থী করে ‘পুরস্কৃত’ করতে চাইবেন রাহুলেরা।

রায়গঞ্জ নিয়ে আরও কিছু জল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল— কংগ্রেস দীপাকে প্রার্থী করলে মমতা তা মানবেন কি? কারণ, দু’জনের সম্পর্ক খারাপ বললেও কম বলা হয়। তবে একই সঙ্গে এ-ও ঠিক যে, কংগ্রেস কাকে প্রার্থী করবে বা করবে না, তা নিয়ে মমতা মাথা ঘামাবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট এক জন প্রার্থী নিয়ে জেদ ধরে থাকলে আসন সমঝোতা প্রক্রিয়া যে বিঘ্নিত হতে পারে, তা বিলক্ষণ বোঝেন তৃণমূল নেত্রী। নীতিগত অবস্থান (বিজেপিকে রুখে দেওয়া) থেকে আসন সমঝোতা হলে মমতা ব্যক্তি প্রার্থী নিয়ে আপত্তি জানাবেন না বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের নেতৃত্ব।

পরিসংখ্যান বলছে রায়গঞ্জ আসনটি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি জিতলেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা উল্টে যায়। বিধানসভা ভোটে দেখা যায় রায়গঞ্জ লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটি জিতেছে তৃণমূল। দু’টিতে বিজেপি। বিজেপির যে দু’জন জিতেছিলেন, তাঁরাও পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁরা হলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়। তা ছাড়া ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, হেমতাবাদ পাঁচটি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল।

তবে দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসকে কোনও আসন ছাড়বেন না মমতা। কারণ, কংগ্রেসের যতটুকু যা ‘প্রভাব’ আছে, তা উত্তরবঙ্গেই। পক্ষান্তরে, গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে খাতাই খুলতে পারেনি তৃণমূল। ফলে মমতার প্রাথমিক লক্ষ্য হবে, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে উত্তরে বিজেপিকে হারানো। কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, কংগ্রেসের তরফে চারটি আসনের দাবিও জানানো হতে পারে। তেমন হলে চতুর্থ আসনটিও উত্তরবঙ্গেই হবে।

মমতা-রাহুল প্রাথমিক কথাবার্তার পরে কংগ্রেস-তৃণমূল সমীকরণেও কিছু ‘পরিবর্তন’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমত, গত এক সপ্তাহে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর তৃণমূল নিয়ে তেমন কোনও চাঁচাছোলা সমালোচনা করেননি। যা কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রাথমিক কথা হয়ে যাওয়ার ‘সূচক’ বলেই মনে করছেন অনেকে। দ্বিতীয়ত, মহুয়া মৈত্রের প্রশ্নে কংগ্রেস তথা অধীর খানিকটা আগ বাড়িয়েই আক্রমণাত্মক সমর্থন দিয়েছেন। তৃতীয়ত, বাংলায় সিপিএম চেয়েছিল নভেম্বরের মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ও আসন সমঝোতা নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা বলতে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টে দেখা গিয়েছে, অধীরের জেলায় গিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম কংগ্রেসের কড়া সমালোচনা করেছেন। ফলে ‘সমীকরণ’ ইতিমধ্যেই পাল্টাতে শুরু করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement