তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতার নির্দেশ, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ফাইল ছবি।
দলীয় কোন্দল নিয়ে কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক সভায় প্রকাশ্যে দলীয় সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে কঠোর বার্তা দিলেন তিনি। সাফ জানালেন, ভোটে কে, কোথা থেকে লড়বে, তা ঠিক করবে দল। সেই সিদ্ধান্তের কোনও নড়চড় হবে না। পাশাপাশিই, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতার নির্দেশ, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
চলতি মাসের ১৯ তারিখ কলকাতা পুরসভা দিয়ে শুরু হচ্ছে রাজ্যের পুরভোট প্রক্রিয়া। এর পর মে মাসের মধ্যে একে একে রাজ্যের সমস্ত বকেয়া পুরসভায় ভোট করানো হবে বলে আদালতে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর এই দফার জেলা সফরেও বার বার উঠে এসেছে আসন্ন পুরভোটের কথা। কোথাও প্রশাসকদের বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার কোথাও অন্তর্দ্বন্দ্ব মোকাবিলায় দিয়েছেন ধমক। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনেও তার অন্যথা হল না।
কৃষ্ণনগরের পুর প্রশাসককে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই হবে পুরভোট। এর পরই সাংসদ মহুয়াকে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতে মহুয়ার সঙ্গে দলনেত্রীর সম্পর্ক বরাবরই ভাল। গোয়ার বিধানসভা ভোটের আগে সেখানকার দায়িত্ব দিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদকে পাঠিয়েছেন দলনেত্রী। পাশাপাশিই, দলের অন্দরে ‘নাগরিক মুখ’ হিসেবেও মহুয়াকে নম্বর দেন মমতা— এমনই ধারনা ছিল তৃণমূলে। সেই মহুয়াকেই প্রকাশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতার সঙ্গেই মঞ্চে বসেছিলেন মহুয়া। আর মঞ্চের নীচে বসেছিলেন কৃষ্ণনগরের পুর প্রশাসক নরেশ দাস। তাঁকে মমতা বলেন, খুব দ্রুতই ভোট হবে কৃষ্ণনগরে। তিনি যেন তৈরি থাকেন। তার পর প্রায় একই নিশ্বাসে সকলের সামনেই মমতা মঞ্চে আসীন মহুয়াকে সটান বলেন, ‘‘মহুয়া, আমি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই! কে কার পক্ষে-বিপক্ষে আমার দেখার দরকার নেই। এই রাজনীতি এক দিন চলতে পারে, চিরদিন নয়। আর একই লোক চিরদিন একই জায়গায় থাকবে, এটা মেনে নেওয়াও ঠিক নয়। যখন ভোট হবে, দল ঠিক করবে কে প্রার্থী হবে। এখানে কোনওরকম মতপার্থক্য চলবে না। সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। এটা আমি বলে গেলাম।’’ মহুয়া পাল্টা কিছু বলেননি। তিনি নীরবেই নেত্রীর বক্তব্য শোনেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে অসীম সাহা ছিলেন পুরপ্রধান। বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর পুর প্রশাসক হন নরেশ। প্রশাসনিক বৈঠকে তিনিই ছিলেন। অন্যদিকে, জয়ন্ত সাহা হলেন কৃষ্ণনগর উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। কয়েকদিন আগে কৃষ্ণনগরে জয়ন্ত এবং নরেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কিছু পোস্টার পড়ে। সেই পোস্টার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ইউটিউবেও সেই পোস্টারের ছবি দেওয়া হয়। অভিযোগ, তৃণমূলেরই একটি অংশ ওই পোস্টার দেওয়ার পিছনে ছিল। আরও অভিযোগ, মহুয়া ওই অংশকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়েছিলেন। যদিও মহুয়া সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তবে ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটা স্পষ্ট যে, দলনেত্রী মমতা কৃষ্ণনগরের সাংসদ তথা নদিয়ার প্রাক্তন জেলা সভাপতি মহুয়ার উপর খুব সন্তুষ্ট নন। মহুয়াকে বার্তা দেওয়ার পর প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি, কে করেছে না-করেছে। আমি পুলিশকে দিয়ে এনকোয়্যারি (তদন্ত) করিয়েছি। এটা অ্যাকচুয়াল (আসল) ঘটনা নয়। ঘটনাটা সাজিয়ে ঘটানো হয়েছে। তার পর প্রেসকে দেওয়া হয়েছে। আমি এটা এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এবং সিআইডি-কে দিয়ে ক্রসচেক করিয়েছি।’’ জয়ন্তকে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ উঠেছিল। তোমার এর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।’’