flood

Flood: ‘ম্যান মেড বন্যা’য় ক্ষতিপূরণ চাইবে রাজ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা চিঠি দেবেন মোদীকেও

অবস্থান আরও কঠোর করে শনিবার তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয় না কেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেছিলেন, ‘‘এখনই ব্যবস্থা না-নিলে এটা বিদ্রোহে পরিণত হবে।’’ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান আরও কঠোর করে শনিবার তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন। সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাতে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয় না কেন্দ্র।

Advertisement

আটটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত ২২ লক্ষের বেশি মানুষ। বহু ঘর-বাড়ি, চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমন্বয়ের বার্তাও ঝাড়খণ্ড সরকারের উদ্দেশে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আকাশপথে হুগলির বন্যাকবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন তিনি। পরে নবান্নে ফিরে প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সেরে মমতার মন্তব্য, “লোকে এখন উৎসব পালন করবে, নাকি ডিভিসি জল ছেড়ে যে ক্রিমিনাল অফেন্স করেছে, তার জন্য গরু-ছাগল নিয়ে কোমর জলে ভুগবে! এটা অপরাধ। আমরা এ বার ঠিক করেছি, ক্ষতিপূরণ চাইব।”

শনিবার রাজ্যের দাবি, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পাঞ্চেত এবং মাইথন জলাধার থেকে

Advertisement

৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। দুপুর একটায় তা বাড়িয়ে করা হয় এক লক্ষ কিউসেক। রাতে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেকে। শুক্রবার সকাল থেকে দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। বিকেলের পরে পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক করা হয়। আবার বৃহস্পতিবার ভোরে রাজ্যকে না-জানিয়েই ঝাড়খণ্ডের শিকাতিয়া জলাধার থেকে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। শুক্রবার সকালে সেই পরিমাণ বেড়ে হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এ বার হিসেব করলে দেখবেন, ১০ লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছেড়েছে। জীবনে কখনও এমন হয়নি। এটা কি জাস্টিস? ডিভিসি প্রতি বার জল ছেড়ে আমাদের ডোবাবে? কেন জলাধারের সংস্কার করবে না? জলাধারের জল এ ভাবে ছাড়লে বাঁধ-সেতু ভেঙে যায়। তার দায়িত্ব নেবে কে? তার দায়িত্ব ডিভিসি-কে নিতে হবে।”

যদিও ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে সূত্রের দাবি, ‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’-এ রাজ্যের প্রতিনিধি থাকেন। জলাধার থেকে জল ছাড়ার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ নেওয়া হয়।

এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে হুগলির আরামবাগের পল্লিশ্রীতে পৌঁছন। হেলিপ্যাড থেকে এক কিলোমিটার দূরে আরামবাগ শহরের পশ্চিম হরিপুরে যান। সেখানেও তিনি জলাধারগুলির সংস্কারের দাবিতে সরব হন। মমতার কথায়, “ঝাড়খণ্ড সরকার আমাদের বন্ধু। আমি অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের জলাধারগুলি সংস্কার করুন। আপনারা এ ভাবে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলবেন না। জল ছেড়ে দিয়ে আমাদের লোকেদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না। ঝাড়খণ্ড সরকারকে বলব, তাঁরাও যেন বিষয়টি তুলে ধরেন। দরকার হলে আমাদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা তৈরি করুন। কেন্দ্রীয় সরকারও মাস্টার প্ল্যান তৈরি করুক। টাকা দিক। চাই না, এ সব নিয়ে ক্ষোভ বাড়ুক বা অন্য রাজ্যের দ্বন্দ্ব হোক। মিলেমিশে থাকতে চাই।”

রাজ্যের দাবি, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা, বাগনান, হুগলিতে আরামবাগ, খানাকুল ১ ও ২, পুরশুড়া, বাঁকুড়া শহর, বড়জোড়া, সোনামুখী, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর, ডেবরা, পিংলা, সবংয়ের একাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, ভগবানপুর, বীরভূমের নানুর, পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম-২, কেতুগ্রাম-২ ব্লক, পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত। এ দিন পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিপুল।

রাজ্যের আরও বক্তব্য, গত দু’বছরে অন্তত পাঁচটি দুর্যোগ এবং বন্যা সামলাতে হয়েছে। তার উপরে প্রতি বার ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। তাতে ভেসে যাচ্ছে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ফের এক বার চিঠি লিখবেন। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে তাঁর নির্দেশ, কেন্দ্রীয় কৃষি এবং ক্যাবিনেট সচিবকেও চিঠি লিখে রাজ্যের অবস্থান জানাতে হবে।

কেন্দ্রের ‘আচরণ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা এ দিন বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথায়-কথায় মানবাধিকার কমিশন পাঠান। একটা ছোট নির্বাচনে হাজার-হাজার পুলিশ পাঠান। বিজেপির চুনোপুঁটি ক্যাডারকেও ৩০-৪০টি করে নিরাপত্তা রক্ষী দেন। অফিসারদেরও চমকান, ডেকে পাঠান। কিন্তু ডিভিসির ছাড়া জলে যখন বাংলা ডুবে যায়, তখন আপনি (প্রধানমন্ত্রী) একটা পয়সাও ছাড়েন না কেন? এনডিআরএফ, এসডিআরএফের টাকাও দেন না। যেটুকু পাই, তা আমাদের প্রাপ্যর থেকে পাই, আপনারা দেন না। আমপান, ফণী, বুলবুল, ইয়াসে কী টাকা দিয়েছেন? কিচ্ছু দেন না, মুখে বড়-বড় কথা বলেন।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা অভিযোগ, “উনি ঠিকই বলেছেন— ম্যান-মেড বন্যা। বন্যা মেড বাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসির জল কবে এবং কতটা পরিমাণে ছাড়া হবে, তা রাজ্যকে আগে জানানো হয়। ওই সংক্রান্ত আলোচনার কমিটিতে রাজ্যের প্রতিনিধি, ইঞ্জিনিয়ার আছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি ডিভিসির জল ছাড়ার বিষয়ে কিছু আগে না-জেনে থাকেন, তা হলে প্রশ্ন ওঠে, রাজ্যের প্রতিনিধিরা কি বৈঠকে যাননি? নাকি গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেননি? এমন হয়ে থাকলে দোষ কার?”

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন “পুরো বন্যার জন্য উনি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দায়ী। গত কয়েক দশক ধরে প্রাক-বর্ষায় যে কাজ হয় তা তিনি এ বার করেননি। কারণ, এই মুখ্যমন্ত্রী ভাতা দেওয়ার কাজে এবং ভবানীপুরের উপনির্বাচন নিয়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। এই সরকারের দু’টি দফতর আছে। ভাতা দেওয়া দফতর এবং একশো দিনের কাজে টাকা খাওয়া দফতর। যে এলাকাগুলিতে বন্যা হয়েছে, তা শুধু মাত্র বাঁধ ভাঙার কারণে হয়েছে। ডিভিসি’র জল ছাড়ার কারণে হয়নি”।

এ দিন দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে এসে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতরের মন্ত্রী কে ছিলেন? রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী কাজ করে যাননি কেন? বাংলার মানুষকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। তছনছ সব থেকে বেশি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।”

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুজোর সময়েও সর্বক্ষণ নজরদারি চালাবে সরকার। যে কর্মী-অফিসারেরা
ছুটি পাবেন না, তাঁদের পরে ছুটি দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement