পার্থ এবংমমতা। ফাইল চিত্র।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শিল্প দফতরের দায়িত্ব কি এ বার নিজের হাতে নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আর্থিক মামলায় গ্রেফতার-হওয়া পার্থের অনুপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিল্প প্রোমোশন বোর্ডের সভা বসছে। যদিও ওই সভা আগেই আহূত ছিল। কিন্তু ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’-তে সেটি আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হয়ে উঠেছে বলে প্রশাসনিক মহল মনে করছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টের সময় বোর্ডের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রাজ্যের শিল্প ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ঘটনাচক্রে, তার আগেই রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পার্থ সম্পর্কে কোনও আলোচনা করেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে।
মমতা তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২০২১ সালের অগস্টে রাজ্যের শিল্প প্রোমোশন বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছিল। শিল্প নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকারী এই বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। শিল্পমন্ত্রী ওই বোর্ডের এক জন সদস্য। সেই অধিকার বলেই তিনি ওই সভায় উপস্থিত থাকেন।
তবে ওই বোর্ড গঠনের একটি ইতিহাসও রয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ের পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় পার্থকে শিল্পমন্ত্রী করার বিষয়ে আপত্তি এসেছিল দলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশের তরফে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ পার্থ তখন মন্ত্রী হতেই ‘অনীহা’ প্রকাশ করেন। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঠিক করেন, পার্থ শিল্প দফতর পাবেন। কিন্তু তার মাথায় থাকবে শিল্প প্রমোশন বোর্ড। যার নেতৃত্বে থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। যে সূত্রে দলের অন্দরে পার্থ-বিরোধীদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল— শিল্পমন্ত্রী হলেও নিজের দফতরে ‘নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব’ থাকবে না তৃণমূল মহাসচিবের।
রাজ্যে শিল্প ও বিনিয়োগক্ষেত্রে সরকারের ‘নোডাল’ সংস্থা হিসাবে কাজ করে শিল্পোন্নয়ন নিগম (ডব্লুবিআইডিসি)। মূলত তাদের মাধ্যমেই রাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনা হয়। তা সত্ত্বেও প্রোমোশন বোর্ড তৈরি করার কী প্রয়োজন ছিল? নবান্ন সূত্রের খবর, কোনও শিল্প-প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে প্রমোশন বোর্ড। পাশাপাশি, শিল্পক্ষেত্রে লক্ষ্যপূরণের পথে কোনও বাধা আসছে কি না এবং বাধা এলে কী করে তার সমাধান হতে পারে, সে বিষয়টিও ‘নজরে’ রাখে বোর্ড। তিন-চার মাস অন্তর বোর্ডের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এবং শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
গত শনিবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ। গ্রেফতারির পর ছ’দিন কেটে গেলেও তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরাননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধী শিবির এবং দলের অন্দরে দাবি উঠছে, পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার। এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার পার্থকে দল থেকেই বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম বার পার্থকে বাদ রেখেই শিল্প-সংক্রান্ত ওই বোর্ডের সভার আয়োজন এবং মমতার সভাপতিত্ব করার ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের পাশাপাশি পার্থের হাতে এখনও রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষদীয় দফতর। প্রশাসনিক মহলের অনুমান, আপাতত পার্থের হাত থেকে শিল্পমন্ত্রকের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিতে পারেন। বাকি দু’টি দফতর নিয়েও অনতিবিলম্বে পর্যালোচনা করা হবে।