ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ভবনে ডাকা এই বৈঠকের কথা জানালেন দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে পার্থের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিতে পারে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। আবার অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, এখনই তেমন কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না-ও নেওয়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ স্তরে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হতে পারে শুধু।
তবে পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে ছেঁটে ফেলা হবে কি না, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, বুধবার রাতভর তল্লাশিতে পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকা এবং সোনা মিলিয়ে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার হওয়ায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিষয়টিতে রুষ্ট স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে পার্থের মন্ত্রিত্ব রাখা নিয়ে সমস্যা ক্রমবর্ধমান। সেই আশঙ্কা আরও বেড়েছে পার্থ নিজে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার প্রশ্নের জবাবে পাল্টা ‘কারণ’ জিজ্ঞাসা করায়। তৃণমূলের অন্দরের খবরকে বিশ্বাস করতে গেলে, বৃহস্পতিবারের বারবেলায় সম্ভবত শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব। সেটা কোন পর্যায়ে যায়, সেটাই এখন দেখার। তবে দলের অন্দরে যাঁরা মনে করছেন, পার্থের কাণ্ডকারখানায় গোটা দলের মুখে চুনকালি পড়েছে, তাঁরা ক্রমশ সরব হচ্ছেন পার্থের শাস্তির দাবিতে। বস্তুত, দল ের অনদরে সেই মর্মে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’-ও তৈরি হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, যাঁরা সকলেই অভিষেকের অঅনুগামী বলে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার সকালেই কুণালের একটি টুইট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। কুণাল ওই টুইটে পার্থকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। পরে আরও এক বার টুইট করে কুণাল লিখলেন, এ বার দল বিষয়টি দেখছে। তাই আগের টুইটটি তিনি মুছে দিচ্ছেন। কুণালের আগের টুইটটি মুছে দেওয়া নিয়েই নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে পার্থ সংক্রান্ত বিষয়ে। দলের একাংশের মতে, কুণাল আগ বাড়িয়ে পার্থকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছিলেন। তাই তাঁকে টুইট মুছতে হয়েছে। তবে তৃণমূলের নেতাদের মতে, সকালেই শীর্তষনেতৃত্বের তরফে দিনের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন কুণাল। বাকি দিনটা সেই পথেই চলেছে।
পরের টুইটে কুণাল লিখেছেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তাঁকেও সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন বলেও দাবি করেছেন কুণাল। সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন, আগের করা টুইটটি তিনি মুছে দেবেন। অর্থাৎ, তাঁর বক্তব্য জেনে দলীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করতে রাজি হওয়ায় তিনি তাঁর আগের দাবি থেকে সরে আসছেন। তবে এই ব্যাখ্যার কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। এখন দেখার, কুণালের টুইটের সুর আদতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শীর্ষনেতৃত্বেরই বেঁধে দেওয়া কি না। তেমন হলে পার্থের শাস্তি নিয়ে কোনও দোলাচল নেই।
‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে পরের পর টাকা, গয়না, জমির নথি উদ্ধার হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পার্থকে তাঁর মন্ত্রিত্ব এবং সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি তুলেছিলেন কুণাল। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই একটি টুইট করেন তিনি। সেই টুইটে তিনি লেখেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর মন্ত্রিত্ব এবং দলের সমস্ত পদ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া উচিত। তাঁকে বহিষ্কার করা উচিত। যদি আমার এই বিবৃতি দলের ভুল মনে হয়, তা হলে আমাকে সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব অধিকার রয়েছে দলের। তৃণমূলের সৈনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাব।’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত শুক্রবার বর্তমান শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর নাকতলার বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। প্রায় ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আপাতত ১০ দিনের ইডি হেফাজতে রয়েছেন পার্থ।
পার্থকে গ্রেফতারের পরে পরেই কুণাল, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল ও সরকার। তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও তৃণমূলের পদ থেকে যে সরানো হচ্ছে না বলেই বার্তা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু রবিবারেই কুণাল পার্থর বিরুদ্ধে সুর চড়া করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত যিনিই হোন, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা (ইডি) ন্যূনতম তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দিলে তার ভিত্তিতেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল।