ফাইল ছবি।
বেলা বয়ে যায়, সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। এই প্রসঙ্গে বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি দফতরগুলোকে হুঁশিয়ারি শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জল সরবরাহ প্রকল্প-সহ একাধিক অসমাপ্ত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে নরমে-গরমে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশ দিলেন বাঁকুড়ার প্রশাসনকে।
সোমবার, জঙ্গলমহলের পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সভায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। মঙ্গলবারও একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর রাগের মুখে প়়ড়লেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক। পানীয় জল প্রকল্পের কাজ কেন আট বছর ধরে ‘আন্ডার প্রসেস’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘যে ডিপার্টমেন্ট করছে, তাদের কানমলা খাওয়া উচিত।’’
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলায় জেলায় ঘুরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি সেই বৈঠকের আদলে খানিক পরিবর্তন এনেছেন মমতা। সোমবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে দেখা গিয়েছিল, খোদ অভিযোগকারীকে মঞ্চে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি কোনও ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিও পড়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবারও তার অন্যথা হল না। রবীন্দ্র ভবনে বাঁকুড়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে জনতার সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ করার দিকেও বিশেষ জোর দিতে দেখা গেল মমতাকে।
এ দিন নিজের কাছে থাকা কাগজ খুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে ঘোষণা হওয়া জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে থাকা রায়পুর ব্লকের জল সরবরাহ প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি। সরাসরি জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২১.২০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ১৪ সালে ঘোষণা হয়েছিল। আপনারা আমাকে দেখাচ্ছেন আন্ডার প্রসেস।’’
তখন জেলাশাসক জবাব দেন, ‘‘৮৫ শতাংশ হয়েছে ম্যাম।’’
শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘না, এ সব বললে হবে না। আমার প্রজেক্ট পড়ে আছে আট বছর। কানমলা খাওয়া উচিত যে ডিপার্টমেন্ট করছে।’’
এ ছাড়া আরও একাধিক অসমাপ্ত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। কিসান মান্ডিতে ধান ওজনের মেশিনে গোলমাল করে কৃষকদের ঠকানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ করে অনেক চিঠি তাঁকে পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠি পড়েও শোনান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, সরকারি কর্তারা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন না, যাতে কৃষকরা আড়তদারদের কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এখন থেকে সরকারি নোডাল অফিসার কিসান মান্ডিতে ওজনের যন্ত্র পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেবেন এবং প্রতিটি মান্ডিতে থাকবে সিসিটিভি। পাশাপাশি কোন পরিস্থিতিতে পড়ে কৃষকরা আড়তদারদের কাছে সস্তায় ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, সরকারি আধিকারিকদের তা-ও নজরে রাখার নির্দেশ দেন মমতা।