উন্নয়ন প্রকল্পগুলির বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র
সরকার আসবে যাবে, তা বলে উন্নয়নের কাজ আটকে রাখলে চলবে না— মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক-পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন দফতরের সচিবদের এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবছেন আপনারা! ভোটের বছর। তিন-চার মাস কাটিয়ে দিলেই হল। কিন্তু এমন মনোভাব বদল করুন। সরকার আসবে যাবে, রাজ্যের উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে।’’
এর পরেই প্রশাসনিক কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই করোনা কমতে শুরু করবে। জোর কদমে বকেয়া প্রকল্পের কাজ করতে শুরু করুন।’’ মূলত ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো প্রকল্পগুলি দ্রুত শুরু করতে বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পরিবারপিছু কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জেলা গত বছরের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। যা শুনে জেলাশাসকেরা বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরায় তাঁদেরও কাজ দিতে হয়েছে। বেশি মানুষ কাজ পাওয়ায় পরিবারপিছু কাজের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রসচিবকে রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কত জন কাজ পেয়েছেন,তার হিসেব কষতে বলেন। ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের ৭% কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে মজুরির টাকা পাননি বলে মুখ্যসচিব জানান। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতসচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আমপান-ত্রাণের যে টাকা এখনও বিলি হয়নি, সাত দিনের মধ্যে তা দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
পঞ্চায়েতসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ২০ লক্ষ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজ কয়েক মাসের মধ্যে শেষ করার অনুরোধ জানান। গ্রামীণ রাস্তার কাজও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী লরি গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে যাওয়ায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে বলে মুখ্যসচিব বৈঠকে জানান। তা শুনে ক্ষিপ্ত মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে বলেন, ‘‘আপনাকে আমি অনেক বার এ নিয়ে সচেতন করেছি। কারা কী করে, তা আমার জানা আছে। ব্যবস্থা নিন।’’ পূর্ত দফতরের হাতে থাকা ছোট ছোট রাস্তার মেরামতির কাজ শেষ করার জন্য তৎপর হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামের বিদ্যুতের কী অবস্থা জানতে চেয়ে দ্রুত পরিষেবা ঠিক করার
নির্দেশ দেন।
বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী যে বিজলি-সড়ক-আবাস-কাজের ব্যবস্থা করতে তৎপর, তা এ দিনের বৈঠকের পরে স্পষ্ট। পাশাপাশি কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি ও জনজাতি স্কলারশিপ, বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, মাটিসৃষ্টি, মাছ চাষের মতো প্রকল্পগুলিও জোরের সঙ্গে রূপায়ণের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন মনে করছে, করোনা-পর্বের পরে জনজীবন স্বাভাবিক করতে মানুষের হাতে কাজ বা অর্থ পৌঁছনো জরুরি। তাই পরিকাঠামো
প্রকল্পগুলি আপাতত বন্ধ রেখে উপভোক্তাভিত্তিক প্রকল্পগুলিতে জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।