Coronavrus

উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিডের সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

যদিও জেলাশাসক জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির কারণে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিডের সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলিকে নিয়ে প্রশাসনিক মূল্যায়ন বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে পেশ করা সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই চার জেলার মধ্যে সংক্রমণের হার উত্তর ২৪ পরগনাতেই সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, এ দিন ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? শহুরে এবং গ্রামীণ এলাকা রয়েছে ওখানে। ডেঙ্গিই প্রতি বছর ওখান থেকে আসে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বিধায়কেরা নিজের এলাকার যত্ন নিচ্ছেন তো? পুর দফতরকে বলব, কেন এটা হচ্ছে না? সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ভীষণ ঘিঞ্জি এলাকা, চটকল রয়েছে অনেক, জনসংখ্যা বেশি।” যদিও জেলাশাসক জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির কারণে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।

উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণের (পজ়িটিভ) হার ২০.৬। সুস্থ হয়ে ছাড়া পাচ্ছেন ৭৭.২ শতাংশ। মৃত্যুহার ২.২%। হাওড়াতে সংক্রমণের হার ১৩.৭%। সুস্থতা ও মৃত্যুহার যথাক্রমে ৮২.৮ ও ২.৭%। হুগলিতে সংক্রমণের হার ৮.৩ শতাংশ। সুস্থতার হার ৭৭.৭% এবং মৃত্যুহার ১.৬%। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের হার ৭.৯ শতাংশ। সুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুহার যথাক্রমে ৭৮.৪ এবং ১.৬%।

Advertisement

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হাওড়া। যদিও সেখানে সুস্থতার এবং মৃত্যুহারও সর্বাধিক। মমতা বলেন, “হাওড়া চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদেরও জনঘনত্ব বেশি। প্রচুর বাইরের লরি-গাড়ি ঢোকে। উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাড়িতে থেকেও তো অনেকে ভাল হচ্ছে। মাস্ক পরার প্রচার আরও ভাল করে করতে বলুন। কোভিড বিধি মানার প্রচার পুলিশ দিবসে বেশি করে প্রচার হোক।”

এক টানা বেশ কিছু দিন তিন হাজারের কোটায় ঘোরাফেরার পর রাজ্যে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ বেশ খানিকটা কমল। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৯৬৭ জন। গত শনি ও রবিবার এ রাজ্যে যথাক্রমে ৩ হাজার ২৩২ এবং ৩ হাজার ২৭৪ জন নতুন করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছিল। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৩৭। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যে দৈনিক মৃত্যু ৫০-এর কোটায় ঘোরাফেরা করছিল। মাঝে শনিবার তা কমে ৪৮ হয়। রবিবার ফের তা বেড়ে ৫৭-তে এসে ঠেকে। গত ২৪ ঘণ্টাতেও ৫৮ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

তবে এর মধ্যেও রাজ্যে সুস্থতার হার বেশ আশাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ২৮৫ জন করোনা রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, এক দিনে সুস্থতার নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৯২ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তার জেরে রাজ্যে সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৭৮.৪৬ শতাংশ।

করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্য প্রশাসনের। ডেঙ্গি-রোধে জেলা জুড়ে প্রচারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারি কার্যালয়গুলির চত্বর পরিষ্কার রাখা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট অফিসগুলি নিজেরা পরিষ্কার করে না। আবার রাজ্যকেও তা করতে দেওয়া হয় না। তাই কেন্দ্রীয় দফতরগুলিকে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার নির্দেশিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিড এবং ডেঙ্গি সংক্রান্ত প্রচারে আশা-কর্মীদেরও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য।

খাল সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে টানাপড়েন লেগে থাকে। সেচসচিব নবীন প্রকাশ এবং পুরসচিব খলিল আহমেদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “আমার না ওর দায়িত্ব, দেখার দরকার নেই। মানুষকে সাহায্য করতে হবে সেটাই মূল। নবীন ও খলিল সমন্বয় করবে।”

মমতার নির্দেশ, কোভিড-কালে পুরসভাগুলির নির্বাচন করা যাচ্ছে না। তা বলে পরিষেবায় যাতে ঘাটতি না-হয়, তার দায়িত্ব আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিদেরই নিতে হবে।

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement