মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র
আগামী ১ অক্টোবর থেকে রাজ্যে যাত্রা, নাটক, থিয়েটার, চলচ্চিত্র ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করার অনুমতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ওই দিন থেকে সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, আবৃত্তি এবং জাদু প্রদর্শনীর মতো অনুষ্ঠানও চালানো যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে করোনা সংক্রমণ রুখতে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত মার্চ মাসের শেষে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে প্রেক্ষাগৃহ-সহ বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি। আনলক পর্ব চললেও সংক্রমণের আশঙ্কায় এত দিন ওই জায়গাগুলি খোলার অনুমতি মেলেনি। শনিবার সেই অনুমতিই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের আগে অন্য কোনও রাজ্য এই ছাড়পত্র দিয়েছে কি না তা মনে করতে পারছেন না কেউই। এ দিন টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১ অক্টোবর থেকে যাত্রা, নাটক, মুক্তমঞ্চে থিয়েটার, চলচ্চিত্র, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, আবৃত্তি এবং জাদু প্রদর্শনী শুরু করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্তও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। প্রথমত, এমন অনুষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৫০ জন বা তার কম হতে হবে। দ্বিতীয়ত, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠান করতে হবে। তৃতীয়ত, মাস্ক পরা-সহ অন্যান্য বিধিও মানতে হবে।
ভিড়ের কারণে যাতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় এ বার পুজোয় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না বলে দিন কয়েক আগে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশে রুজি-রুটি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শিল্পীদের একটি বড় অংশ। ফেসবুকেও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরম্ভ করার আবেদন জানিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র।
আরও পড়ুন: বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হলেন মুকুল রায়, পদ হারিয়ে ক্রুদ্ধ রাহুল
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর আনন্দবাজার ডিজিটালকে লোপামুদ্রা বললেন, ‘‘গতকাল শুটিংয়ের ফাঁকে আবেগপ্রবণ হয়ে দিদিকে মনের কথা লিখেছিলাম। তাঁকে ট্যাগও করি। আমার ম্যানেজার অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। মৃদু ধমক দিয়েছিল জয়ও। বলেছিল, সব ব্যাপারে না জড়ালেই নয়! এক রাতের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নির্দেশ দেখে নতুন করে আবেগে ভাসছি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সঙ্গীত দুনিয়াকে নতুন অক্সিজেন দিল। আমি ভী-ষ-ণ খুশি।’’
আরও পড়ুন: শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে গরু সিন্ডিকেটের যোগ, বিএসএফ কর্তার নালিশেও কাজ হয়নি
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে উচ্ছ্বসিত সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাতারাতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ভাবে সাড়া দেবেন ভাবতেই পারিনি। অতিমারি সঙ্গীত দুনিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ছোটবড় সমস্ত মানুষের উপার্জনেও থাবা বসিয়েছে। আমি পারলে কাল থেকেই কোমর বেঁধে নেমে যাই। তবে সব নিয়ম মেনে, গুছিয়ে নিতে যতটা সময় লাগে, সেটা তো সকলকে দিতেই হবে।’’
অক্টোবরের প্রথম দিন থেকে প্রেক্ষাগৃহ খোলার খবরে খুশি পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ধরা পড়ল সেই উচ্ছ্বাসের রেশ। বললেন, ‘‘এর থেকে ভাল খবর আর কিছু হয় না। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, যাত্রা, নাটক এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। বহু মানুষের রুজিরুটি এর সঙ্গে জড়িয়ে। সকলের জন্য এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত।’’ করোনার কারণে আটকে রাজের দু’টি ছবিও। তাই নিয়ে পরিচালকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ধর্মযুদ্ধ এবং হাবজি-গাবজি নামে আমার দু’টি ছবি তৈরি হয়ে পড়ে আছে। সে গুলির মুক্তি নিয়ে এ বার ভাবনাচিন্তা শুরু করব। তবে অন্যের ছবির প্রোমোশনের জন্যও আমি ময়দানে নামতে রাজি আছি।’’
অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট প্রসঙ্গে নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৫০ জন পারফর্মার, না কি পারফর্মার ও দর্শক মিলিয়ে ৫০ জন, বিষয়টি পরিষ্কার হল না। আশা করি সরকার এ সম্পর্কে সবিস্তারে গাইডলাইন দেবেন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সাহায্য করবেন। শুধু হল খুলে দিলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না।” পাশাপাশি তিনি বলেছেন, “ওএটি বস্তুটি কী সেটাও বুঝিনি।”