রায়গঞ্জের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
নাগাল্যান্ড ইস্যুতে ক্রমেই সুর চড়াচ্ছে বিজেপি-বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল। সেই তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকেও উঠল সেই প্রসঙ্গ। বিএসএফ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিধি বদলের বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গে তুলে মমতা বিঁধলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। নাগাল্যান্ডের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন বিধানসভা ভোট চলাকালীন কোচবিহারের শীতলখুচির ঘটনাকে। আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা বিএসএফ-এর নয়া ফরমানে রাজ্যের সেই অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করতে মুখ্যমন্ত্রী হাজির হয়েছিলেন রায়গঞ্জে। সেখানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তোমাদের ওখানে একটা সমস্যা আছে। বিএসএফ মাঝে মাঝেই গ্রামে ঢুকে পড়ে। অত্যাচার করারও অভিযোগ আসে। এমনকি ভোটের সময় লাইনেও তাঁদের দেখা যায়!’’ তার পরই দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রশাসনিক কর্তাদের ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘তোমরা কি কখনও বিএসএফ-এর ডিজি-র সঙ্গে কথা বলেছ?’’ তাঁর নির্দেশ, ‘‘পুলিশের ডিজি সরাসরি কথা বলবেন বিএসএফ-এর ডিজি-র সঙ্গে।’’ মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো জেলায় এই সংক্রান্ত সমস্যা আছে বলে দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘বিএসএফ করে কি, ওঁদের ১৫ কিলোমিটার আসার কথা। সেটাও পুলিশকে জানিয়ে। তা না করে, ওঁরা যেখানে সেখানে ঢুকে পড়ে।’’ তার পরই মুখ্যমন্ত্রী টেনে আনেন নাগাল্যান্ড প্রসঙ্গ, তার সঙ্গেই টেনে আনেন ভোটের সময় এবং সম্প্রতি কোচবিহারে দুটি গুলিচালনার প্রসঙ্গও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নাগাল্যান্ডে দেখেছ তো কী সমস্যা হল! শীতলখুচিতে দেখেছ। ক’দিন আগে কোচবিহারে তিন জন গুলিতে মারা গিয়েছেন। স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে কোনও সঙ্ঘাত হোক, এটা আমি চাই না। তাই পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে।’’ মমতার কথায়, ‘‘আমাদের অনেক আইসি ভাবেন, না না ওঁদের ছেড়ে দাও। কিন্তু কেন? বিডিও-দের বলব, একটু বেশি সতর্ক থাকুন। কোনও অভিযোগ এলে আইসি-কে নিয়ে এলাকায় যাবেন। বলে দেবেন, এটা আপনাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’
আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, তা অগ্রাহ্য করে গ্রামে গ্রামে বিএসএফ ঢুকে পড়ছে, অত্যাচার করছে। এ জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বাড়তি সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা। বিএসএফ-বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ফরমান রদের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি সংসদেও তৃণমূল সাংসদদের সরব হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার প্রশাসনিক বৈঠকে নাগাল্যান্ড প্রসঙ্গ তুলে বিএসএফ ইস্যুতে কেন্দ্রের উপর আরও চাপ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।