ফাইল চিত্র।
বীরভূমের রামপুরহাটে ভয়াবহ হিংসা ও অগ্নিকাণ্ডের তাণ্ডব চলেছে বলে মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য যে হিংসার সংস্কৃতি ও অরাজকতার গ্রাসে চলে গিয়েছে, এই ঘটনাই তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তদন্তের আগেই রাজ্যপালের এমন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন ও অবাঞ্ছিত মন্তব্য’ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের পদমর্যাদার সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয় বলে মনে করিয়ে ধনখড়কে আবার কড়া চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এমন কোনও ঘটনা ঘটলে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করাই সকলের কর্তব্য। কিন্তু রাজ্যপাল তা না করে অবিবেচক মন্তব্যে পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বা দেশের অন্যত্র কোনও ঘটনা ঘটলে রাজ্যপাল যে নীরব থাকেন, তা নিয়েও ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যপালের মন্তব্য ও তার জেরে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা চিঠিতে নবান্ন ও রাজভবনের চলতি সংঘাতে ফের নতুন মাত্রা যোগ হল।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে ‘গণহত্যা’র অভিযোগকে সামনে রেখে রাজ্যে ফের কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি করতে মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে রাজভবনে গিয়েছিলেন বিজেপির বিধায়কেরা। সেখান থেকেই রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁরা ভিডিয়ো বৈঠক করেন। তবে তার আগেই দার্জিলিঙে বসে ধনখড় টুইটে মন্তব্য করেন, ‘‘রামপুরহাটে ভয়াবহ হিংসা ও অগ্নিকাণ্ডের তাণ্ডব হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, হিংসার সংস্কৃতি ও অরাজকতার গ্রাসে চলে গিয়েছে রাজ্য।’’ মুখ্যসচিবের কাছে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ঘটনার তথ্য চেয়েছেন বলেও জানান রাজ্যপাল।
এর পরেই রাজ্যপালকে চিঠি লিখে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী জানান, গোটা ঘটনা ও প্রাণহানি রাজ্যের কাছেও ‘দুঃখজনক’। ঘটনার পরেই রাজ্য প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের যে নির্দেশ রাজ্য দিয়েছে, সেই প্রক্রিয়ায় কোনও সহায়তা না করে রাজ্যপাল প্রকাশ্যে যে ‘অবিবেচনাপ্রসূত ও অবাঞ্ছিত মন্তব্য’ করেছেন, তা তাঁর পদমর্যাদার উপযুক্ত নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই ঘটনা কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, সেই প্রশ্নও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারা এমন ঘটনা ঘটাল, তাদের খুঁজে বার করার জন্য তদন্তে সব রকম চেষ্টা করা হবে’। প্রসঙ্গত, বিধানসভায় এ দিন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ওই ‘ষড়যন্ত্রের’ সম্ভাবনার কথা বলেছেন। পাশাপাশিই রাজ্যপালকে মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বগটুই গ্রামের ঘটনার আগে রামপুরহাটে তৃণমূলের এক জন উপ-প্রধানকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। সেই ঘটনার অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনও তদন্তসাপেক্ষ। কোনও তদন্তের জন্য অপেক্ষা না করেই রাজ্যপাল এ দিন যে মন্তব্য করেছেন, তার যৌক্তিকতা নিয়ে চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।