স্কুলের অন্যতম সেরা ছাত্র বিপ্রজিৎ
বহু দিন পরে স্কুল খুলেছে। হয়তো অনভ্যাসেই প্রথম দিন স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয় কয়েক জনের। ততক্ষণে গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন বাড়ি না ফিরে গঙ্গার ঘাটে ঘুরতে চলে যায় নদিয়ার ফুলিয়া শিক্ষানিকেতনের দশম শ্রেণির আট-ন’জন পড়ুয়া। স্নান করতেও নেমে পড়ে কয়েক জন। এক জন আর উঠতে পারেনি। বিপ্রজিত গড়াই (১৫) নামে সেই ছাত্রের দেহ দুপুরে ওই ঘাটের কাছেই মিলেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ শান্তিপুরের বয়রা ঘাটে ঘটনাটি ঘটে। স্কুলের অন্যতম সেরা ছাত্র বিপ্রজিৎ। বাড়ি শান্তিপুরের নবলা পঞ্চায়েতের পরেশনাথপুরে। স্কুল তার বাড়ি থেকে শ’তিনেক মিটার দূরে। তবু কয়েক জন সহপাঠীর সঙ্গে সে যখন স্কুলে পৌঁছয়, সাড়ে দশটা পার হয়ে গিয়েছে। স্কুলের গেট বন্ধ। বিপ্রজিতের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের কথা অনুযায়ী, প্রথমে তারা ভেবেছিল কালীনারায়ণপুর রেলব্রিজে ঘুরতে যাবে। তা বেশি দূর হওয়ায় বিপ্রজিৎই আপত্তি করে। পরে তারা বয়রা ঘাটের দিকে রওনা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বিপ্রজিৎকে তলিয়ে যেতে দেখে সহপাঠীরা ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার লোকজন প্রথমে তল্লাশি শুরু করেন। খবর দেওয়া হয় শান্তিপুর থানাতেও। ঘণ্টা দুয়েক বাদে বয়রা ঘাটের কাছেই বিপ্রজিতের দেহ মেলে।
বিপ্রজিতের বাবা বিশ্বজিৎ গড়াইয়ের শাড়ির ব্যবসা। মা রিনা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তার তলিয়ে যাওয়ার কথা শুনে ঘাটে ছুটে যান বাড়ির লোকজন। বিপ্রজিতের দাদু সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “ছেলে স্কুলে যাওয়ার খানিক পরে ওর মা জানতে পারে, ও স্কুলে নেই। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘাটে আসি।” রিনা বলেন, “স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে কেন ও ভাগীরথীতে চলে এল?” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বপ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি নিয়মে যথা সময়ে স্কুলের গেট বন্ধ করা হয়। কিন্তু তার জন্য বিপ্রজিৎকে হারাতে হতে পারে তা কে ভেবেছিল? তার অকালমৃত্যু আমাদের কাছে বড় আঘাত।”