BJP

আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব বাড়ছে বিজেপিতে

জিতেন্দ্রবাবুকে দলে নিতে আপত্তি করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। তিনি তাঁর ওই ‘ব্যক্তিগত মত’ এ দিনও বদলাননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৫৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল-সহ অন্য দল থেকে নেতা, জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব বাড়ল বিজেপিতে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে আসানসোলের তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়। পরিস্থিতি এত দূর গড়ায় যে, জিতেন্দ্রবাবুকে দলে নিতে আপত্তি জানানোয় বিজেপি নেতৃত্ব মঙ্গলবার শো-কজ করেছেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে। এ ছাড়া, নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা ও আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ দশরথ তিরকেকে দলে নেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলে এ দিনই শো-কজের চিঠি পেয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা ও নাগরাকাটা মণ্ডল-১-এর সভাপতি সন্তোষ হাতি।

Advertisement

জিতেন্দ্রবাবুকে দলে নিতে আপত্তি করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। তিনি তাঁর ওই ‘ব্যক্তিগত মত’ এ দিনও বদলাননি। তবে বলেছেন, ‘‘আমি দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। দল কোনও বিষয়ে আমার উত্তর চাইলে আমি তা দিতে দায়বদ্ধ।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই জানিয়েছেন, দল বাবুলের সঙ্গে কথা বলবে। বিজেপি সূত্রের খবর, আজ, বুধবার শাহের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বাবুল। সায়ন্তনও দুঃখপ্রকাশ করে দলকে চিঠি দিয়েছেন। তবে ক্ষোভের সুর মিলিয়ে যায়নি। যেমন— গঙ্গাপ্রসাদবাবু সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘উচিত উত্তর পাবেন।’’

গত শনিবার মেদিনীপুরে শাহের সভামঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী-সহ ১০ জন বিধায়ক, এক জন সাংসদ এবং এক জন প্রাক্তন সাংসদ দল বদল করে বিজেপি-তে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে এক জন সিপিএম, এক জন সিপিআই এবং এক জন কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে গিয়েছেন। বাকিরা গিয়েছেন তৃণমূল থেকে। শুভেন্দু তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাও পেয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির আদি নেতাদের অনেকেই দলের মধ্যে প্রশ্ন তুলছেন, যাঁদের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে দল এত দিন এগোল, তাঁদেরই বিধানসভা ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরে নিলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় কি? যাঁরা তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভে বিজেপিকে ভোট দিতে চাইছিলেন, তাঁরা যদি দেখেন, ক্ষোভের কারণরাই বিজেপিতে, তা হলে তাঁরা কেন পদ্মফুলকে নির্বাচন করবেন? শুভেন্দুর সূত্রে নারদ-কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গও ফের উঠছে বিজেপির ভিতরে। দলের ওই আদি নেতাদের আরও বক্তব্য, তৃণমূল থেকে এসেই অনেকে বড় নেতা হয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে জায়গা এবং নিরাপত্তা পাচ্ছেন। অথচ, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দল করা নেতা-কর্মীরা তা পাচ্ছেন না। তা হলে বিজেপি নিজেকে ‘পার্টি উইথ ডিফারেন্স’ বললে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে কি?

Advertisement

বিজেপির অন্দরের এই অসন্তোষের প্রকাশও ঘটেছে গাইঘাটায় এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে। গাইঘাটায় পোস্টার পড়েছে, যেখানে লেখা— ‘আমরা কোন বিজেপি?’ এবং ‘যাদের চোর বলতাম, তারাই দলের সম্পদ’। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুভেন্দুর অনুগামীদের সঙ্গে বিজেপির আদি কর্মীদের একাংশের সংঘর্ষ হয়েছে সোমবার। এ দিন ওই জেলারই নারায়ণগড় ফের উত্তপ্ত হয়েছে আদি এবং নব্য বিজেপির সংঘর্ষে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যেও অন্য দল থেকে নেতা-জনপ্রতিনিধি নিয়ে দল ভোটে জিতেছে। এ রাজ্যেও তেমনই হচ্ছে। এতে কারও ব্যক্তিগত আপত্তি থাকলে তা দলের অন্দরে জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা আছে। কিন্তু এ সব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা যায় না। কাকে নেওয়া হবে বা নেওয়া হবে না, তা নিয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তা দলের সকলকেই মানতে হবে।’’ দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তরা এলে তাঁদের হাতে বিজেপির রাশ যায় না। তাঁদেরকেই দলের আদর্শ মেনে নিজেদের বদলাতে হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement