বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় উঠে আসছে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।
বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনায় উঠে আসছে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ। একই সঙ্গে বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় পুরসভার অনীহার অভিযোগও উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বিধাননগর পুরসভার বোর্ডের বৈঠকে সরব হলেন সেখানকার এক পুরপ্রতিনিধি তথা বরো চেয়ারম্যান।
কলকাতায় বাঘা যতীন, ট্যাংরার পাশাপাশি বিধাননগরেও হেলে পড়া বাড়ির খবর সামনে এসেছে। সম্প্রতি সেখানকার নারায়ণপুর এবং জগৎপুরে দু’টি বাড়ি হেলে গিয়েছে। তদন্ত শুরু করে ওই বাড়িগুলির মালিক এবং প্রোমোটারদের ডেকে পাঠিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে সোমবার বোর্ডের বৈঠকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তথা দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান প্রণয় রায় অভিযোগ করেন, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন তাঁর বরোর এক ইঞ্জিনিয়ার। এমন চললে সরকারি আধিকারিকেরা বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা বোধ করবেন বলেও জানান প্রণয়।
সূত্রের খবর, হাতিয়াড়া এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, ওই পুর ইঞ্জিনিয়ারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। তিনি একটি বেআইনি নির্মাণে কাজ বন্ধের নোটিস দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিপদের আশঙ্কায় ওই ইঞ্জিনিয়ার থানায় লিখিত অভিযোগ না করে পুরপ্রতিনিধিকে জানান। প্রণয়ের এমন অভিযোগে বোর্ডের সদস্যদের অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছেন।
অবশ্য প্রণয়ের অভিযোগটিই একমাত্র অভিযোগ নয়। বিধাননগর পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে যাওয়ায় ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে প্রোমোটারের লোকজনের চড়াও হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। সূত্রের খবর, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃধা মার্কেট তল্লাটে মাস দুই-তিন আগে এক ইঞ্জিনিয়ার গিয়েছিলেন একটি নির্মাণস্থল পরিদর্শন করতে। কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও সেখানে নির্মাণের কাজ চলছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে প্রোমোটারের লোকজন ওই ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর লোকজনের পায়ে বাইক নিয়ে ধাক্কা মারে। নিউ টাউন থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হলেও এ পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি বলেই খবর। গত বছর বিধাননগর পুর এলাকার নয়াপট্টিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি বেআইনি ক্লাব পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙতে গিয়েছিলেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেখানে দুষ্কৃতীরা দু’পক্ষের গায়ে কেরোসিন ছিটিয়ে প্রকাশ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। সেই ক্লাবটির সভাপতি ছিলেন খোদ এক পুরপ্রতিনিধি।
এ হেন ঘটনার পরে পুরপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, প্রোমোটার তথা দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে পুর কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রোমোটারদের এমন বাড়বাড়ন্তের পিছনে
শাসকদলের স্থানীয় নেতাদেরই একাংশের মদত রয়েছে। এক নেতার কথায়, ‘‘বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে প্রোমোটারকে বেআইনি নির্মাণে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রোমোটারের নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কি সহজে ছেড়ে দেবেন? যে কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।’’
গত ডিসেম্বরেই এক প্রোমোটারের থেকে ৫০ লক্ষ টাকা চেয়ে না পাওয়ায় তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সমরেশ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পুরপ্রতিনিধি এখনও ফেরার। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, প্রোমোটারদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুরপ্রতিনিধিদের নিজেদের ভূমিকাও পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। পুর কর্তৃপক্ষেরও তা নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবারের বোর্ডের বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ারদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে আলাদা করে আলোচ্যসূচি রেখেছিলেন প্রণয়। তা নিয়ে কথা বলার সময়েই প্রণয় তাঁর বরোর ইঞ্জিনিয়ারের হুমকি পাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘আমার যা বলার বৈঠকে বলেছি। আপনার যা জানার কর্তৃপক্ষের থেকে জেনে নিন।’’ আর বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যিনি হেনস্থার শিকার হয়েছেন, তিনি তো পুরসভাকে কিছু জানাননি। তাই পুরসভার এ নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।’’