মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ দিলীপের। —ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরোধিতায় রাজ্য জুড়ে অশান্তির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারকেই কাঠগড়ায় তুললেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরাই ঝামেলা পাকাচ্ছে। অথচ তাদের রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আইন মানছেন না, আর কাউকে আইন মানার কথা বলছেনও না।
নাগরিক সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর রবিবার তৃতীয় দিনেও রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের নামে হিংসার ঘটনা অব্যাহত।দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।পাল্লা দিয়ে সড়ক ও রেল অবরোধ হয়েছে। চলেছে ভাঙচুরও। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আহত হয়েছে পুলিশও।
এমন চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে এ দিন কলকাতায় বিজেপির পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক সংশোধনী বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক রাষ্ট্রবিরোধী গতিবিধি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশি মুসলমানরা রাস্তায় নেমে যে ভাবে ব্যাপক হিংসা ছড়াচ্ছে এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে, এটা নজিরবিহীন। সব দেখেও হাতে হাত রেখে বসে রয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী খালি মিষ্টি মিষ্টি বাণী দিচ্ছেন। বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব সারছেন উনি। গুলি চালানো তো দূর, পুলিশ কোথাও লাঠিও চালাচ্ছে না। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি এখনও।’’
ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেও এ দিন নতুন করে অভিযোগ তোলেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে রাজ্য সরকার চাইছে এই ঘটনা বাড়ুক। দেখাতে চাইছে, লোকসভায় বিজেপিকে জিতিয়েছ, এ বার মজাটা দেখ।এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাই অনুপ্রবেশকারীদের খোলা রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন। তারা তিন দিন-চার দিন ধরে তাণ্ডব করবে, তার পর উনি নামবেন।’’
সংসদে পাশ হওয়ার পর নাগরিক সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই আইন মানছেন না। তাই বাকিদেরও আইন মানার কথা বলতে পারছেন না বলেও দাবি করেন দিলীপ ঘোষ। এ নিয়ে আদালতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। দিলীপ বলেন, ‘‘দেশবিরোধীরা যদি আইন না মানে, তা হলে আমরাও আইন মানব না, এ আমি প্রকাশ্যে বলে রাখছি। কারণ মুখ্যমন্ত্রী নিজে আইন মানছেন না। সরকারি টাকায় প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, উনি নাকি বাংলায় সিএবি হতে দেবেন না। যে আইন লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যাতে সই করেছেন, সারা দেশে সেই আইন চালু হবে। পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের বাইরে যে এখানে চালু হবে না? উনি কী করে সংবিধান বিরোধী কথা বলছেন? এ নিয়ে আদালতে যাব আমরা। উগ্রপন্থীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন উনি।’’
তবে দিলীপের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা নন, কেরল, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়-সহ আরও অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিএবি মানবেন না বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কথা বললেও, বার বার বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।’’
কিন্তু বিজেপির আর এক সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব হিংসা নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু তা করতে পারছেন না উনি। তাই ইস্তফা দেওয়া উচিত ওঁর। সিএবি হতে দেবেন না বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা তো ওঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না! কেন্দ্রীয় আইন মানব না, কোনও রাজ্যকে সংবিধান এ কথা বলার অধিকার দেয়নি।’’
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী অবশ্য দোষারোপ বা পাল্টা দোষারোপে যাননি। বরং রাজ্যবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এ দিন সংবাদমাধ্যমে অধীর বলেন, ‘‘বাংলার মানুষকে বলছি, আপনারা সবাই ভারতের নাগরিক। কারও কথায় প্রভাবিত হবেন না। কেউ বলল চিলে কান নিয়ে চলে গিয়েছে, কান না দেখে চিলের পিছনে দৌড়বেন না। হিংসার আশ্রয় নেবেন না। এই যে স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, ভাঙচুর চলছে, এতে কার ক্ষতি হবে? সাধারণ মানুষের হয়রানি-ই বাড়বে। তাই সংযত হতে হবে সকলকে।’’