চোরবাগান সর্বজনীনের ২০২০ সালের দুর্গা প্রতিমা।
কোভিড সংক্রমণের কারণে নমো নমো করেই সারতে হয়েছিল ২০২০-র শারদোৎসব। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায়্ পরিস্থিতি এখনও খুব অনুকূল নয়। এমতাবস্থায় এ বছরের শারদীয়া উৎসবের আয়োজন কী ভাবে হবে, তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় কলকাতার সব পুজো কমিটি। এই দঃসময়ের মেঘের মাঝে কিছুটা হলেও রুপোলি আভা দেখতে এবং দেখাতে চাইছে উত্তর কলকাতার চোরবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এ বছর নিজেদের পুজোর পাশাপাশি আরও ১০টি পুজো কমিটিকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তাদের সিদ্ধান্ত, ১০টি বারোয়ারি পুজো কমিটিকে এ বার দেবীমূর্তি বানিয়ে দেওয়া হবে। চোরবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির কর্তা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত বছর যখন কোভিড সংক্রমণ শুরু হয়, তখন আমাদের চোখে সমাজে দু'টি ভাগ দেখেছিলাম। এক দল কোভিডের ভয়ে ভীত। আরেক দল খিদের জ্বালায় ধুঁকছে। গত বছর আমরা আমাদের মণ্ডপে ৯০ জনকে কাজ দিতে পেরেছিলাম। এ বার দেখলাম ছোট ছোট পুজো কমিটিগুলো পুজো নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। তাই ভাবনা, দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সে কারণে পুজো কমিটিগুলির পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গে প্রান্তিক মানুষদের জন্য কিছু করতেই আমরা ১০টি পুজো কমিটিকে প্রতিমা বানিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
চোরবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসবের ২০২১ সালের খুঁটিপুজোর অনুষ্ঠান।
প্রতিমার জন্য পুজো কমিটিগুলিকে চোরবাগান সর্বজনীন পুজো কমিটির কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। সেই আবেদনপত্রের ভিত্তিতে আগামী ১৫ অগস্ট চোরবাগানেই লটারির মাধ্যমে ১০টি পুজো কমিটির নাম বেছে নেওয়া হবে। বাছাই কমিটিগুলিকে ১০১ টাকা দিয়ে প্রতিমার জন্য বায়না করতে হবে, আর কোনও অতিরিক্ত অর্থ তাদের দিতে হবে না। চোরবাগানে এই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন প্রদীপ্ত সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘কলকাতার পুজোর ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে ২০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এই উদ্যোগে আমরা যে ভাবে সাড়া পেয়েছি, তাতে আরও অনেক আবেদনই জমা পড়বে। তাই ১০টির বদলে ১৫-২০টি প্রতিমা দেওয়ার কথাও ভাবতে হচ্ছে।’’
গত বারের মতো এ বারও চোরবাগানের থিমমেকার বিমল সামন্ত। মূলত তাঁর তত্ত্বাবধানেই এই মুর্তিগুলি তৈরি বলে জানানো হয়েছে। চোরবাগানের মাঠেই এই মুর্তিগুলি তৈরি করা হবে। মূর্তি গড়তে নবদ্বীপ এবং অন্যান্য জায়গা থেকে ১০ জন মৃৎশিল্পীকে আনা হচ্ছে। তাঁদের করোনা টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে, থাকা খাওয়ার বন্দোবস্তও করবেন কর্তারাই। দেবীমূর্তির জন্য গয়না আনা হবে বোলপুর থেকে। পুজো-ভাবুক বিমল বললেন, ‘‘১০টি প্রতিমাই হবে একচালার। কিন্তু তাদের গুণগত মান দেখে সবাই যাতে মুগ্ধ হন, আমি সেই প্রচেষ্টাই করে যাব।’’