থানায় ডেকে ইংরেজি শেখাচ্ছেন ‘পুলিশকাকু’

ছবিটা অবশ্য এখন বদলে গিয়েছে। ভয় তো দূরের কথা, থানায় ঢুকে ওরা এখন ‘পুলিশকাকু’দের সঙ্গেই খুনসুটি করে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

রানিনগর  শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪০
Share:

থানায় ক্লাসে ওসি সমিত তালুকদার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

একটা সময় থানা কিংবা পুলিশের নাম শুনলেই চমকে উঠত ওরা। থানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে বলত, ‘‘মা, ওই দেখো পুলিশ!’’

Advertisement

ছবিটা অবশ্য এখন বদলে গিয়েছে। ভয় তো দূরের কথা, থানায় ঢুকে ওরা এখন ‘পুলিশকাকু’দের সঙ্গেই খুনসুটি করে। আর যে বিষয়ের নাম শুনলে ওদের জ্বর আসত সেই ইংরেজিতে তারা এখন অল্প-বিস্তর কথাও বলছে!

এমনটা কোন ম্যাজিকে সম্ভব হল?

Advertisement

রানিনগরের ওসি সমিত তালুকদার হাসছেন, ‘‘ভয়কে জয় করতে পারলেই সব সহজ হয়ে যায়। ওই খুদেরাও সেটাই করেছে। আমি শুধু ওদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছি।’’

মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম রানিনগর। এই থানায় এর আগেও কাজ করেছেন সমিতবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘এই তল্লাটকে আমি হাতের তালুর মতো চিনি। এখানকার ছেলেমেয়েরা অঙ্ককে তেমন ভয় পায় না। কিন্তু ইংরেজির নাম শুনলেই গুটিয়ে যায়। তাই জনা কুড়ি খুদেকে মাস চারেক থেকে থানায় ডেকে খেলাচ্ছলে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে। ওরা খুব দ্রুত শিখছেও।’’

থানা চত্বরেই রয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যারাক। সেখানেই শনিবার বিকেলে ও রবিবার সকালে চলে ইংরেজির ক্লাস। সমিতবাবু নিজেও ক্লাস নেন। তবে থানার দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে যাতে ক্লাস কামাই না হয় সে জন্য দু’জন শিক্ষকও রেখেছেন তিনি। ‘পুলিশকাকু’র এই ক্লাসের খবর মুখে মুখে রটতে দেরি হয়নি। এখন রানিনগর তো বটেই, ডোমকলের অনেকেও এখন ছেলেমেয়েদের সেখানে পাঠাচ্ছেন। ডোমকলের পানিপিয়া গ্রামের দুই বোন হেনরিটা ফারহানা ও অ্যাঞ্জেলিনা নুসরত জাহান ইংরেজির ক্লাসে যায়। একটি বেসরকারি স্কুলের পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ওই দুই পড়ুয়ার কথায়, ‘‘ওখানে তো আমরা খেলতে খেলতেই ইংরেজি শিখি।’’

হেনরিটা ও অ্যাঞ্জেলিনার বাবা শহিদুল ইসলাম পেশায় চাষি। তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েরা আগে ইংরেজিতে ভয় পেত। এখন বাড়িতেও ওরা মাঝেমধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে। আমিও ‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘ভেরি গুড’ বলে উৎসাহ দিই। আমার দৌড় তো ওইটুকুই!’’

ইংরেজি বই দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করত রানিনগরের পঞ্চম শ্রেণির দেবস্মিতা দত্তও। তার মা ঝুম্পা দত্ত বলছেন, ‘‘শনিবার দুপুর থেকেই থানার ক্লাসে যাওয়ার জন্য মেয়ে হইচই শুরু করে। এ ভাবে যে খেলতে খেলতেও ইংরেজি শেখা যায় তা কিন্তু আমাদের থানার বড়বাবু করে দেখালেন।’’

‘বড়বাবু’র এমন ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও। তিনি বলছেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। জেলার অন্য থানাতেও এমনটা করা যায় কি না দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement